যমুনার পানি বিপদসীমার ওপরে, কয়েকশ বাড়ি ঘর বিলীন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং প্রবল বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে ৫ শতাধিক বাড়ি ইতিমধ্যেই বিলীন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৯১ মিটার। পয়েন্টে নদীর পানি ১২ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ১২ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নীচ প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জে তৃতীয় দফায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সে সঙ্গে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার সদর, কাজিপুর ও শাহজাদপুর উপজেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত এক মাসে ৫ শতাধিক বসতভিটা যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে গত দুইদিন ধরে যমুনার পানি আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
জানা গেছে, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে জেলার কাজিপুর উপজেলার খাষ রাজবাড়ী, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর এবং কৈজুরী ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহ ধরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেললেও বর্ষা মৌসুমে তা কোনো কাজে আসছে না। স্থানীয় মাধ্যমে আরো জানা গেছে, নদী তীরবর্তী বিভিন্ন নিম্ন এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। চলনবিলসহ অভ্যান্তরীণ ফুলজোড়, ইছামতি, হুড়াসাগর, বড়াল, গোহালা, গুমানি নদীসহ বিভিন্ন নদ-নদীতের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খাষ রাজবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাসরাজবাড়ী গুচ্ছগ্রামের ৬০-৭০টি বাড়িঘর ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গুচ্ছগ্রামের মানুষগুলো ফের ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জানান, সদর উপজেলার কাওয়কোলা ইউনিয়নে একমাসে দুইশতাধিক বাড়িঘর ও তিন হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে হাটবয়ড়া, দোগাছি, বড়কয়ড়া, ছোটকয়ড়া, চন্ডাল বয়ড়া, বেড়াবাড়ি, কৈগাড়ি, দোরতা ও বর্ণি গ্রামের আরো পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর, চার কিলোমিটার পাকা রাস্তা, কয়েকশ একর ফসলি জমি, বন্যা ও দুর্যোগকালিন আশ্রয়কেন্দ্র মুজিবকেল্লা, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীন ১২৬টি ব্যারাক, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ছয়টি প্রাইমারি স্কুল এবং একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন। এরই মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে যমুনার ডানতীরে দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙন চলে আসছিল। গত এক মাসে এ এলাকার প্রায় পৌনে দুইশ বসতভিটা ও প্রায় ৩০০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দিলেও তিন বছরেও তা শেষ হয়নি। ফলে কিছুতেই ভাঙনমুক্ত হচ্ছে না স্থানীয়রা। কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, কয়েকদিন ধরে হাঁট পাচিলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। স্থানীয় কোনো ত্রাণ চায় না, এক বান্ডিল টিনও চায় না। তারা চায় দ্রুত নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের হাঁটপাচিল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিতদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, নদী ভাঙনরোধে প্রকল্পের পাশাপাশি জিওটিউব ডাম্পিং শুরু হয়েছে। পাউবো এর ড্রেজার দিয়ে চ্যানেলটিকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের জন্য খনন কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ভাঙনরোধে কাজ করা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন