যশোরে আলু চাষে সাফল্য, ২৯ বিঘা জমিতে সাড়ে ২৭শ’ মন উৎপাদন
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে চলতি বছরে গোল আলুর চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে জিয়াউর রহমান নামের এক চাষি। আলুর দাম কম হওয়ায় বীজ আলুসহ সব আলুই কোল্ড স্টোর জাত করছেন তিনি।
সরেজমিনে জানাগেছে, পশ্চিম মণিরামপুরের রাজগঞ্জের হরিহরনগর ইউনিয়নের ডুমুরখালী গ্রামের মোসলেম আলী সরদারের ছেলে আলু চাষি জিয়াউর রহমান। এ বছর তিনি ডুমুরখালী ও দশআনি মাঠে ২৯ বিঘা জমিতে গোল আলুর চাষ করেছে। সম্প্রতি ওই ২৯বিঘা জমির আলু তুলতে ও বস্তাবন্ধি করতে স্থানীয় পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের কাজে লাগিছেন।
দেখা গেছে, মহিলা শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে আলু কুড়িয়ে ঝুড়িতে করে এনে রাস্তার ধারে স্তুপ করে রাখছেন। আর কেউ কেউ সেখান থেকে বাছাই করে ৬০ কেজি ওজনের বস্তাবন্ধি করে রাস্তার উপর সারিবদ্ধ করে রাখছে। সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে কোল্ড স্টোরে।
আলু চাষি জিয়াউর রহমান জানান- ২৯বিঘা জমিতে প্রায় ২শ’ মন বীজ আলু রোপন করা হয়। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি বিশ্ববিদ্যালযের কৃষি গবেষক ড. মঞ্জুরুল ইসলামের মাধ্যমে বাংলাদেশ টিস্যু কালচারালের উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই বীজ আলাদা ভাবে রোপন করে প্রায় ৩শ’ মন ভিত্তি আলুর বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। ভিত্তি বীজ গুলো সম্পূর্ণ আলাদা করে বস্তাবন্ধি করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান- এবারে আলুই রোগব্যধি খুবই কম দেখা দিয়েছে। দুই একটা আলুই দাগ দেখা দিয়েছে। আলুর চেহারাই যেন ঝলক মারছে। বাছাইতে খুব কম আলই বাদ যাচ্ছে। প্রতি কাঠা জমিতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মন পর্যন্ত আলু ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১শ’ মন এর উর্দ্ধে আলু উৎপিদন হয়েছে। সর্বমোট ২৯বিঘা জমিতে উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৭শ’ মন আলু। সব আলুই ৬০ কেজি করে বস্তাবন্ধি করা হয়েছে। আলু উঠানোর মুখে দাম কম থাকায় বিক্রি না করে বীজ আলুসহ সকল (১২শ’ বস্তা) গোল আলুই ঝিকরগাছার মালঞ্চি ও টাউয়ার কোল্ড স্টোরে গুদাম জাত করা হয়েছে। আলু চাষের প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে ৯ লাখ টাকা।
উল্লেখ্য, আলু চাষি জিয়াউর রহমান গত বছর ১৬ বিঘা জমিতে গোল আলুর চাষ করেছিল। আলু উঠানোর সময় দাম কম থাকায় বিক্রি না করে সে সময়ও ৭শ’ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরে রেখেছিল। স্টোর থেকে বের করে বীজ আলু হিসাবে প্রতি বস্তা ২৫শ’ টাকা দরে ২শ’ বস্তা বিক্রি করা করেছিল। বাকী ৫শ’ বস্তা আলু বাজারে বিক্রি করেছিল। যা প্রতি বস্তা ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
আলু চাষি জিয়াউর রহমান এ প্রতিনিধিকে আরো জানান- আমি বিগত কয়েক বছর ধরে গোল আলুর চাষ করে আসছি। আলু চাষের শুরু থেকে আলুর বাম্পার ফলন পেয়ে আসছি। কিন্তু আলু উঠানোর মহুর্তে দাম খুবই কম থাকে। তাই আমি কম দামে আলু বিক্রি না করে কোল্ড স্টোরে গুদামজাত করে থাকি। দাম বৃদ্ধি হলে স্টোর থেকে বের করে বিক্রি করি। একই উদ্দেশ্যে এ বছরও আমি বীজ আলুসহ প্রায় সাড়ে ২৭শ’ মন আলু কোল্ড স্টোরে গুদামজাত করেছি। আসা করছি গত বছরের ন্যায় এবারও বীজ আলু ও বাজারজাত আলু অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারবো। আর সেটাই যদি করতে পারি তাহলে প্রচুর পরিমান লাভবান হবো। ফলে আগামী বছর আরো বেশি পরিমান জমিতে গোল আলুর চাষ করবো বলে আমি আশা করছি। তিনি আরো বলেন, আমার আলু চাষে সব সময় পরিমর্শ ও দেখাশোনা করেছেন স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রদীপ কুমার।
এ বিষয়ে কথা হয় মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুুমার বিশ্বাসের সাথে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন- এ বছর আলু চাষে রোগব্যাধি কম ছিল। আমি ওই চাষির আলু চাষের কথা শুনেছি। আমার মাঠ কর্মিরা তার চাষের দিকে সব সময় খেয়াল রেখেছে। আমাদের উপদেশে খুব ভাল ফলন পেয়েছে। আসা করছি আগামীতে ওই চাষি অরো বেশি পরিমান জমিতে আলু চাষ করবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন