যশোরের মণিরামপুরে চালের কার্ড বহালের দাবিতে ইউএনওর দপ্তরে গণ-আবেদন
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা সংশোধনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ঢালাওভাবে উপকারভোগীদের কার্ড বাতিল করেছেন বলে অভিযোগ বাদ পড়াদের। কার্ড বহালের দাবিতে গত বুধবার (০৯ নভেম্বর) সকাল থেকে ওই ইউনিয়নের অন্তত ১৫০ জন নারী-পুরুষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন দেন।
আবেদনকারীদের অভিযোগ- গবির-দুস্থ হওয়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান তাঁদের কার্ড করে দিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে তাঁরা চাল পেয়ে আসছেন। সম্প্রতি নতুন কার্ড দেওয়ার নাম করে পরিবেশকদের মাধ্যমে পুরোনো কার্ড সংগ্রহ করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন।
নতুন কার্ড দেওয়ার কথা বলে পুরোনো কার্ড জমা নেওয়ার সময় ১০০ করে টাকাও নিয়েছেন পরিবেশক। এরপর কিছু না জানিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাঁদের কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। তাঁরা কার্ড আনতে মেম্বারদের পিছু হেঁটেছেন। মেম্বররা ৩-৪ হাজার করে টাকা চেয়েছেন। দিতে না পারায় গেলো সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা।
আমিনপুর গ্রামের নবীজান বিবি বলেন- আমি বিধবা। অন্যের বাড়ি কাজ করে খাই। একটা চালের কার্ড ছিলো। তা দিয়ে কোনো রকম চলতাম। মেম্বর টাকা চাইছে। দিতি পারিনি বলে আমার কার্ডটা বাদ করে দেছে। আমি কার্ড ফেরত নিতি উপজেলায় আইছি।
নবীজানের মতো এমন দাবিতে শ্যামকুড় ইউনিয়নের হালসা, পাড়দিয়া, ঘুঘুরাইল, মুজগুন্নি, শ্যামকুড়, আমিনপুর ও হাসাডাঙা গ্রামের অন্তত ১৫০ জন নারী-পুরুষ বুধবার ইউএনও বরাবর আবেদন দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১ হাজার ৯৮০ জন উপকারভোগী আছেন। পুরোনো তালিকা যাচাই করে এঁদের মধ্যে সচ্ছল, প্রবাসী, মৃত, ভুয়াদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গেলো এপ্রিলে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা আসে। সে অনুযায়ী তালিকা সংশোধন করতে শ্যামকুড়ের ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ নাম সংশোধনের জন্য বলা হলেও চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ঢালাওভাবে ১ হাজার ১৫১টি কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। সংশোধনীর নামে তিনি দুস্থ, বিধবা ও প্রতিবন্ধীর নাম বাদ দিয়েছেন।
শ্যামকুড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর ইউনুস আলী বলেন- নাম বাদ দেওয়াদের মধ্যে অধিকাংশ মাঠে কাজ করা। প্রতিবন্ধীও আছেন। এঁদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন লোক ঢুকিয়েছে।
ইউনুস আলী বলেন- লোকজনের সঙ্গে আমরা তিন সাবেক মেম্বার ইউএনও অফিসে ছিলাম। ১৪৩ জন আবেদন করেছেন। অনেকে ফিরে গেছেন। আগামী দিন তাঁরা আবেদন দেবেন।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন- মোট তালিকার ২০-২৫ শতাংশ পরিবর্তন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, যাঁরা সরকারের একটি সুবিধা পায় তাঁদের নাম খাদ্যবান্ধব থেকে বাদ দিতে হবে। নির্দেশনা মেনে তালিকা করা হয়েছে।
এদিকে চেয়ারম্যানের এ কথার সঙ্গে মিলছে না উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের বক্তব্য। যেকোনো ভাতাভোগীর নাম খাদ্যবান্ধব থেকে বাদ দেওয়ার যে কথা চেয়ারম্যান আলমগীর বলছেন, তেমন কিছু খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন- মূলত পুরোনো তালিকা থেকে ভুয়া, সচ্ছল, প্রবাসী ও মৃতদের নাম বাদ দিতে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের কোনো সুবিধা ভাতাভোগীদের কেউ পেলে তাঁর নাম এই তালিকা থেকে বাদ যাবে। কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চেয়ারম্যানদের কাজ করতে বলা হয়েছে।
ইন্দ্রোজিৎ সাহা আরও বলেন- সঠিক যাচাইবাছাই না হওয়ায় শ্যামকুড়ে ১ হাজার ১৫১টি কার্ড বাতিল হয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবির হোসেন বলেন- লোকজন এসেছিলো। তাঁদের আবেদন দিতে বলেছি। যাচাইবাছাই করে পাওয়ার যোগ্য হলে তাঁদের নাম যুক্ত করার সুযোগ আছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন