যশোরের মনিরামপুরে সাবেক স্ত্রীকে না পাওয়ার ক্ষোভে হত্যা, স্বামীর স্বীকারোক্তি
যশোরের মণিরামপুরে গৃহবধূ হীরা বেগম (২৮) হত্যার ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন দ্বিতীয় স্বামী ইউপি সদস্য ইসলাম গাজী। হীরা বেগমকে না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে তাঁকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকার করেছেন ইসলাম গাজী।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর নিম্ন আদালতের বিচারক আরমান হোসেনের আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তি দেন। এরপর আদালত তাঁকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে শুক্রবার সকালে ইসলাম গাজীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন গত বুধবার বিকেলে মণিরামপুর বাজার থেকে ১০০ টাকায় চাকুটি কেনেন মেম্বর। এরপর রাত ৮ টার দিকে মণিরামপুর-নওয়াপাড়া সড়কের ধারে জয়নগরে জনৈক শফিয়ার রহমানের কলা খেতে হীরা বেগমকে উপর্যুপরি চাকু দিয়ে আঘাত করেন ইসলাম। এ সময় ধাওয়া খেয়ে পালাতে গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে একটি মেহগনী বাগানে চাকু ফেলে পালিয়ে যান তিনি।
পরে রাতেই যশোর শহরের বেজপাড়ায় মামার বাড়ি আত্মগোপন করেন ইসলাম গাজী। হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার ভোরে সেখান থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ইসলাম গাজীকে মণিরামপুর থানায় সোপর্দ করে র্যাব।
এদিকে হীরা বেগম খুনের পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে মণিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা নড়াইল সদরের বাগডাঙা গ্রামের আক্তার মোল্লা। সে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শুক্রবার বিকেলে ইসলাম গাজীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মণিরামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারেফ হোসেন বলেন, মণিরামপুরের চাকলা গ্রামের সুমন হোসেনের স্ত্রী হীরা বেগম। স্ত্রী ও ২ সন্তানকে (১ মেয়ে ও ১ ছেলে) বাড়িতে রেখে সুমন নড়াইলে শ্বশুরের এলাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসা করতেন। এ সুযোগে স্ত্রী ও ২ সন্তান রেখে হীরার সাথে পরকীয়া করেন মশ্মিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বর চাকলা গ্রামের ইসলাম গাজী। ৫ মাস আগে সুমনকে তালাক দিয়ে ইসলামকে বিয়ে করেন হীরা। এরপর হীরাকে নিয়ে মণিরামপুর বাজারে ভাড়া বাসায় ওঠেন মেম্বর।
এসআই মোশারেফ বলেন, নিজের ২ সন্তানের মায়ায় ও পরিবারের চাপে ১ মাস আগে ইসলামকে তালাক দেন হীরা। এরপর নড়াইলে বাবার রাড়িতে রেখে তাঁকে আবার আগের স্বামী সুমনের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। সন্তানদের মায়ায় সুমনকে বিয়ে করলেও মেম্বরের ওপর টান থাকে হীরার।
গত সোমবার (৩ অক্টোবর-২০২২) নড়াইল শহরে সুমনের ভাড়া বাড়ি ওঠার নাম দিয়ে বাবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেখানে না গিয়ে ছোট ছেলে আবু তালেব (৯) সাথে নিয়ে মণিরামপুরে ইসলামের ভাড়া বাড়ি আসেন হীরা। এরপর আবু তালেব অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার রাতে তাকে মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁরা। পরের দিন গত মঙ্গলবার আবু তালেবের বাবা সুমন এসে ছেলেকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হীরার সাথে সেখানে যান ইসলাম। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ছেলেকে নিয়ে নড়াইলে চলে যান সুমন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এরমধ্যে ইসলামের সাথে হীরার মোবাইলে যোগাযোগ চলতে থাকে। ঘটনার দিন বুধবার বিকেলে হীরাকে নিয়ে যশোর থেকে মণিরামপুর বাজারে আসেন ইসলাম। এক সুযোগে দোকান থেকে চাকু কিনে সাথে রাখেন মেম্বর। এরপর দুজনে হোটেলে খাবার খেয়ে মণিরামপুরের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে বুধবার সন্ধ্যার পর হীরা নড়াইলে ফিরতে চাইলে মেম্বর সাথে যেতে চান। মণিরামপুর বাজার থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে তাঁরা দুজনে তাতে চড়ে বসেন। পথিমধ্যে জয়নগরে শফিয়ারের কলা খেতের সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে নেমে পড়েন হীরা। মেম্বরকে ছাড়া তিনি একা নড়াইলে যেতে চান। মেম্বর পিছু না ছাড়ায় হীরা আত্মহত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে মেম্বর হীরাকে মারধর করেন। এ দেখে মোটরসাইকেল চালক চলে যান। তখন ধস্তাধস্তি করতে যেয়ে দুজনে রাস্তার পাশে কলা খেতে নেমে পড়েন। এরপর চাকু বের করে হীরাকে গলায়, বুকে, দু’হাত ও দু’পায়ে একাধিক আঘাত করেন ইসলাম।
মণিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, চাকু মারার ঘটনা টের পেয়ে আশপাশের লোকজন ইসলামকে ধাওয়া করেন। তাড়া খেয়ে সে কয়েকটি ধান খেত পেরিয়ে একটি মেহগনী বাগানে চাকু ফেলে এরপর যশোরে বেজপাড়ায় আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে সেখান থেকে গ্রেফতার হয় ইসলাম।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোশারেফ হোসেন বলেন, হীরা বেগম নড়াইলে গেলে আর ফিরবে না। সন্তানদের নিয়ে প্রথম স্বামী সুমনের সাথে সংসার করবে এমন ক্ষোভে তাঁকে হত্যা করেছে ইসলাম গাজী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন