যে কারণে মেয়াদ শেষ করতে পারেন না পাক প্রধানমন্ত্রীরা
সুপ্রিম কোর্টের রায় বিপক্ষে যাওয়ার পর শুক্রবার পদত্যাগ করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। প্রথমবার মেয়াদ শেষ করার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের হাতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। তৃতীয়বার ২০১৩ সালে ক্ষমতা নেন নওয়াজ। কিন্তু এবারও মেয়াদ পূর্তির আগেই পদ থেকে সরতে হল তাকে। অবশ্য পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ শেষ করতে না পারার ঘটনা নতুন নয়।
এর আগে শওকত আজিজ ছাড়া আর কোনো প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। তবে এবারের ঘটনা একটু ভিন্ন; পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নওয়াজের নাম উঠে আসার পর দোষী সাব্যস্ত হয়ে পদ ছাড়তে হল তাকে।
এর আগে দেশভাগের পর নবাবজাদা লিয়াকত আলি খান পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়ে মেয়াদ না শেষ করা প্রধানমন্ত্রীর খাতা খুলেন তিনি। খাজা নাজিমুদ্দিন এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। মাত্র দুই বছর পর অভ্যন্তরীণ বিবাদে তাকেও ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল পদচ্যুত করা হয়। এবার ক্ষমতায় আসেন বাংলাদেশের বগুড়ার মোহাম্মদ আলি।
পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৫ সালের ৮ আগস্ট মোহাম্মদ আলিকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে ওই বছরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। মুসলিম লীগের ভেতর তৈরি হওয়া বিভক্তি সামাল দিতে ব্যর্থ হন তিনি। দলের ভেতরের বিরোধীরা গঠন করে রিপাবলিকান পার্টি নামের আরেকটি রাজনৈতিক দল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
১৯৫৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবেও স্বীকার করে নেয়া হয় এসময়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপ নেয়ায় অসন্তুষ্ট হয় পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা। পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অপরাধ দেখিয়ে ১৯৬২ সালে তাকে গ্রেফতার করে করাচি সেন্ট্রাল জেলে আটক রাখা হয়। একই কায়দায় পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন পদচ্যুত হন।
জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের সংবিধান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। জেনারেল জিয়াউল হকের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ১৯৭৯ সালে সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে।
১৯৮৫ সালে ঘটে আরেক কাণ্ড । জেনারেল জিয়াউল হক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন মুহাম্মদ খান জুনেজোকে। সামরিক শাসনেরও ইতি ঘটে ওই বছরের ডিসেম্বরে। জুনেজো চেষ্টা চালান সামরিক প্রভাবমুক্ত সরকার গঠনের। তাকে জিয়াউল হক বরখাস্ত করেন ১৯৮৮ সালে।
এবার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন বেনজির ভুট্টো। ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট বরখাস্ত হন তিনি। ১৯৯৩ সালে নির্বাচনে জিতে বেনজির ভুট্টো আবার ক্ষমতায় আসেন। তাকে পুনরায় বরখাস্ত করা হয় ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর। অবশ্য ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে হেরে যান তিনি।
১৯৯৯ সালে বেনজির ও তার স্বামী আসিফ আলী জারদারিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৮৬ লাখ ডলার জরিমানা করা হয় ঘুষ নেয়ার অপরাধে। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন বেনজির ভুট্টো।
এবারে পদ হারালেন প্রধানমন্ত্রী মিয়া মুহম্মদ নওয়াজ শরিফ। ১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৯৯৩ সালের ১৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। মেয়াদ শেষের আগেই সেবার পদ হারান তিনি। এবারও তিনি মেয়াদ শেষ করতে পারলেন না।
এখন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ, পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে যে কেউ। তবে দলের শীর্ষস্থানীয় অনেকেই শাহবাজ শরিফকেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পরবর্তী ৪৫ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সংবিধান সংশোধন করে নওয়াজ শরিফ আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন