যে সাপের ভয়ে পালিয়ে যায় অন্য সাপ
বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগৎ নিয়ে মানুষের আগ্রহ যেমন আছে তেমনি নির্বিচারে বন্যপ্রাণী হত্যাও অনেক মানুষের কাছে বেশ আনন্দের। আর এসবের মধ্যে সাপ মারতে একটু বেশিই উৎসাহ পায় সাধারণ মানুষ।
কোথাও সাপ দেখা গেলে মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে যায়। রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয় আগে কে পিটিয়ে মারবে সাপটিকে। এ যেন জন্ম জন্মান্তরের শত্রুতা। এর ফলে দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে সাপ। সঠিক জ্ঞানের অভাবে নির্বিচারে সাপ মারা এবং এদের আবাসস্থল নষ্ট করায় অনেক প্রজাতির সাপই আজ বিলুপ্তির পথে।
বাংলাদেশের পরিবেশ উপযোগী অন্যতম সুন্দর একটি সাপ হচ্ছে শঙ্খিনী সাপ। এর শান্ত স্বভাবের কারণে যারা সাপ সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাদের কাছে এটি বেশ প্রিয়। অতি সুন্দর ও চমৎকার রঙে সজ্জিত এই সাপের মাথা আকারে বেশ বড়, সারা শরীরজুড়ে কালো ও হলুদ ডোরা। খুব বিষধর হলেও দেশের ইতিহাসে শঙ্খিনী সাপের দংশনে মানুষ মারা যাওয়ার ইতিহাস নেই।
নিউরো টক্সিন বিষ সংবলিত শঙ্খিনী সাপকে এলাকা বিশেষে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন শাখামুটি, সানি সাপ (খুলনা অঞ্চলে), দুইমাথা সাপ ইত্যাদি। এর ইংরেজীত নাম Banded Krait, বৈজ্ঞানিক নাম Bungarus fasciatus। এই সাপদের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য হতে পারে ৬ থেকে ৭ ফুট।
এই সাপকে বাংলাদেশের আবাসিক সাপও বলা হয়। সারাদেশেই এদের দেখা যায় তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় এদের অবস্থান বেশি। দেশের বাইরে ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, লাওস, ম্যাকাও, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেই অংশেও এদের দেখা যায়।
গ্রাম এলাকায় এদের দু’মুখো সাপও বলে তবে সেটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এ সাপের লেজের অংশটি ভোঁতা থাকে বলে অনেকেই একে দু’মুখো সাপ বলে ভুল করে। এরা নিশাচর। ইঁদুরের গর্ত, ইটের স্তূপ এবং উইয়ের ঢিবিতে এরা থাকতে পছন্দ করে। অন্যান্য সাপ এদের ভয়ে পালিয়ে যায়। আইইউসিএন এই সাপকে বাংলাদেশে বিপন্ন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এই সাপ যে এলকায় থাকে অন্যান্য সাপ সাধারণত সে এলাকায় থাকে না কারণ অন্য প্রজাতির সাপ এদের প্রিয় খাদ্য। নিশাচর শঙ্খিনী সাপ কেউটে, গোখরা, কালাচসহ অন্যান্য বিষাক্ত সাপকে খেয়ে ফেলে। এদের ভয়ে অন্য সাপ পালিয়ে যায়।
শঙ্খিনী বর্ষায় ডিম দেয় ও বাচ্চা তোলে। স্ত্রী সাপ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ৪ থেকে ১৪টি ডিম দেয় এবং ডিমের পরিস্ফুটনকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। ডিমের পরিস্ফুটনের জন্য ৬১ দিন সময় লাগে। শঙ্খিনীর বিষ খুব দামি এবং এর চামড়ার বাজার দর অন্য সাপ থেকে খুব চড়া।
রাজশাহী সাপের খামারের পরিচালক বোরহান বিশ্বাস রোমন বলেন, প্রতিটি সাপের জীবন হুমকির মুখে, এখনই প্রজননের ব্যবস্থা না করলে এরা বিপন্ন হয়ে যাবে। প্রজনননের জন্য খামার হতে পারে সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। এতে সাপ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি দামি এই সাপের মাধ্যমে অর্জন করা যাবে বৈদেশিক মুদ্রা।
সাপ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতার কাজ করছেন কামরুজ্জামান বাবু। তিনি জানান, সাধারণ মানুষকে আমরা সেভাবে সচেতন করতে পারিনি তাই তাদের কাছে সাপ মারা যেন উৎসবের কাজ। তবে সাধারণ মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন করতে পারলে এখনো এই সাপকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। তা না হলে অচিরেই এরা হারিয়ে যাবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রানী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান জানান, অনান্য সাপের মতো এই সাপও কমছে মূলত দুটি কারণে। মানুষ নির্বিচারে সাপ হত্যা করছে আর অন্য কারণ হচ্ছে মানুষের কারণে সাপের বাসস্থান বিপন্ন হচ্ছে দ্রুত। যেহেতু এই সাপ অন্য সাপকে খেয়ে ফেলে তাই প্রাকৃতিকভাবেই এই সাপ পরিবেশে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা রাখে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন