যেভাবে বড় বিপদ থেকে বাঁচলো বাংলাদেশ

আঘাতস্থলের কাছাকাছি পার্বত্য এলাকা এবং ভাটার সময়ে আঘাত হানায় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা কম থাকায় ঘূর্ণিঝড় মোরা আশঙ্কার তুলনায় কম ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী উপকূলের কাছাকাছি উৎপত্তি হওয়ায় ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’ বেশি শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারেনি। শুধু প্রকৃতির কৃপা নয় বরং বড় বড় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাও এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উন্নত হয়েছে। আগাম সতর্কতা, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার কারণে মোরা মোকাবেলা সফল হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খালিদ হাসান।খবর চ্যানেল আই অনলাইনের সৌজন্যে।

তিনি বলেন,’প্রথমত এবারের ঘূর্ণিঝড়ের বেলায় আমরা প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ, সৌভাগ্যবান।তবে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের বর্তমান পূর্বপ্রস্তুতি-আগাম সতর্কতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এখন দ্রুত সাধারণ মানুষকে উপদ্রুত এলাকায় থেকে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে। মানুষ সতর্ক বার্তায় বিশ্বাস করছে এবং নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা ঝুঁকি প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।’

মোরা বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার পরও বড়পর্দার কম্পিউটার মনিটরে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। মোরা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করানো ঘূর্ণিঝড়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান অধিপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।

এই ঘূর্ণিঝড়টি যদি চট্টগ্রাম উপকূলের বদলে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতো তাহলে ক্ষতির মাত্রাটা বেশি হতো বলে জানান তিনি।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, দক্ষিণের উপকূল অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা।ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক দিকটি হলো উঁচু জলোচ্ছ্বাস।৬-৭ ফুট ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব। কিন্তু ভাটা থাকায় এবার তা হয়নি। শুধু প্রবল বাতাস তেমন ক্ষয়ক্ষতি করতে পারেনি।’

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয়া হলেও ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রাগত পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,’ সর্বোচ্চ শক্তিশালী রূপ বিবেচনায় নিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়। তবে এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর মাত্রা এক নয়। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হলেও ঘূর্ণিঝড় মোরা ‘ভেরি সিভিয়ার’ বা খুব প্রবল ঘূর্ণিঝড়। সিডরের মতো ‘সুপার সাইক্লোন’ ছিলো না।’

তিনি আরও জানান, বৃষ্টিপাতের মাধমে ঘূর্ণিঝড় মোরা দ্রুতই শক্তি হারিয়ে ফেলে। এই কারণে ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে ভয়ঙ্কর হতে পারেনি মোরা।

ভৌগলিক কারণেই এ অঞ্চলে সৃষ্ট বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। তবে, সাধারণত ১২শ’ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি পথ পেরিয়ে উপকূল অতিক্রম করা ঝড়গুলো বেশি শক্তি সঞ্চয় করে আঘাত হানে। রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৮’শ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র উৎপত্তি হয়।

সাগরে ও স্থলে টানা দুই সপ্তাহের তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট লঘুচাপটি প্রথমে নিম্নচাপ ও পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে রূপ নেয় ঘূর্ণিঝড় হিসেবে। আরো অগ্রসর হয়ে ’মোরা’ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় কুতুবদিয়া দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে।

ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত মোট ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৩, রাঙ্গামাটিতে ২ এবং ভোলার মনপুরায় ১ জন মারা গেছেন। এছাড়া ঝড়ে উপকূলের বহু বাড়িঘর ও গাছপালার ক্ষতি হয়েছে।