রংপুরে পরাজয়েও আ.লীগের শীর্ষ বৈঠকে সন্তোষ
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় পরাজয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ সভাপতিমণ্ডলী।
অবশ্য এই নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই আর প্রচার কৌশলে কোনো ভুল ছিল কি না, দলের ভেতর কোনো সমস্যা ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠক হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কথা হয়েছে রংপুরে বৃহস্পতিবারের ভোট নিয়েও।
পাঁচ বছর আগে একই এলাকায় ভোটে আওয়ামী লীগ নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রায় ৩০ হাজার ভোটে জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে হারিয়েছিলেন। তবে পাঁচ বছর পরের ভোটে ঝণ্টু হেরেছেন এক লাখ ভোটে।
২০১২ সালে ঝণ্টু এক লাখ ছয় হাজারের বেশি ভোট পেলেও এবার তিনি পেয়েছেন ৬২ হাজারর চারশ ভোট। অর্থাৎ পাঁচ বছরে তার ভোট কমেছে প্রায় ৪৪ হাজার।
সাম্প্রতিক আলোচিত তিনটি নির্বাচনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জিতেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে দলটির প্রার্থী হারলেও পাঁচ বছর আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার সেখানে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সেখানে রংপুরে ভোট কমার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি, এই ভোট কমাতেই প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন কমেছে।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা মনে করছেন, ভোটের ফলাফল নয়, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়াটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয়ের নানা কারণ থাকে। সেখানে যেসব সমীকরণ থাকে, সেগুলো জাতীয় নির্বাচনে কাজ করে না।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রংপুরে আওয়ামী লীগ হারলেও সুষ্ঠু ভোট হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আর বিএনপি একে কোনো ইস্যু হিসেবে দাঁড় করাতে পারেনি। উল্টো সেখানে কারচুপির অভিযোগ তুলে তারাই বেকায়দায় আছে।
পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ
বৈঠকে উপস্থিত সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, রংপুরে পরাজয় নিয়ে অসন্তোষ না থাকলেও এত বড় ব্যবধানে হারের কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এই ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো ভুল হয়েছে কি না, সেটিও পর্যালোচনা করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। এখানে ঝণ্টু ছাড়াও দলের আরও নয় জন নেতা ভোটে আগ্রহী ছিলেন। আর এদের সবারই ঝণ্টুর বিষয়ে আপত্তি ছিল। আর মনোনয়নে তার বিরোধিতাকারীরা ভোটেও বিরোধিতা করেছেন কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে বলেছেন শেখ হাসিনা।
অন্য একজন নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজয় স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এক বড় পরাজয় অপ্রত্যাশিত। এটা অতি আত্মবিশ্বাসের ফলও হতে পারে। আর এমন অতি আত্মবিশ্বাস যেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের ক্ষতির কারণ না হয়।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়নের প্রচার আরও জোরেশোরে চালাতে বলেন। বিশেষ করে কোন এলাকায় সরকার কী করেছে, সেগুলো ভালোভাবে ভোটারদেরকে জানানোর তাগাদা দেন।
এই প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে জেলা পর্যায়ে সফরেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কে কোথায় যাবে, এ বিষয়ে আলোচনাও হয় বৈঠকে।
১২ জানুয়ারি সরকারের চার বছর পূর্তিতে জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। ওই সমাবেশেও সরাকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার বিষয়ে কথা হয়। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার বিষয়টিও তুলে ধরার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
ঢাকা উত্তর সিটির ভোট প্রসঙ্গ
নতুন বছরের শুরুতেই ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচনের তফসিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলের ভোটে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ফাঁকা হওয়া পদ পূরণে এবার কাকে মনোনয়ন দেয়া যায়, এ নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।
তবে এখানে আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী করবে, তা প্রকাশ করেননি প্রধানমন্ত্রী। তবে বলেছেন, গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে দল। আর তাকে জয়ী করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে নেতাদের নির্দেশ দেন তিনি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে জরিপ চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা এও বলেন যে, এই জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেয়া হবে।
ওবায়দুল কাদের, বেগম মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাহারা খাতুন, মোশাররফ হোসেন. কাজী জাফর উল্যাহ, ফারুক খান, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মান্নান খান, আবদুল মতিন খসরু প্রমুখ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন