রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য!
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2021/06/neri-Gosthi-pic-700x450.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ৩’শ ৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান অঞ্চলকে বাদ দিয়ে সমতল অঞ্চলের ২৯ জেলার ২১০টি উপজেলায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬’শ ৩৫ জন বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে।
এরই অংশ হিসেবে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৭৫ জন পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এই প্রকল্পের সুফলভোগ করবেন।
ইউনিয়নগুলো হলো- চৈত্রকোল, বড়দরগা, মদনখালী, টুকুরিয়া, বড় আলমপুর, সানেরহাট, পাঁচগাছী ও চতরা।
পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ কর্তৃক ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণীসম্পদ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের শুরুতেই সুফলভোগী পরিবার নির্বাচন ও প্যাকেজভিত্তিক অনুদান বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযাগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুফলভোগী পরিবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে করা হয়েছে স্বজনপ্রীতি। প্রত্যেক সুফলভোগীকে প্যাকেজভিত্তিক অনুদান পেতে গুণতে হয়েছে ৬ হতে ১০ হাজার টাকা। যেসব অসহায় সুফলভোগী টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, এই প্রকল্পে একটি ক্রসব্রীড বকনা গরু, ১’শ ২৫ কেজি গো-খাদ্য, ৪টি টিন, ৪টি আরসিসি পিলার, ১’শ ৯০টি ইট ও ১টি সাইনবোর্ড রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা ইউপি সদস্যকে না জানিয়ে সুফলভোগী পরিবার নির্বাচনে আদিবাসী নেতা চৈত্রকোল ইউনিয়নের খালিশা (আদিবাসী পল্লী) গ্রামের জোহান মিনজির পুত্র আগষ্টিন মিনজি (৫১)কে দায়িত্ব প্রদান করেন। চতুর ঐ আদিবাসী নেতা সরকারী সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে অসহায় ও হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে নিজ নামসহ তার ছোট ভাই ও নিকটাত্মীয়দের তালিকাভুক্ত করেন। উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ সুফলভোগী পরিবার নির্বাচনে কোন প্রকার তদারকি বা যাচাই বাচাই না করেই সেই তালিকা অনুমোদন করেন।
উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী ছিলিমপুর ও খালিশা গ্রামে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও কোন সাইনবোর্ড নেই, গরু আছে গো-খাদ্য দেয়া হয়নি, দেয়া হয়েছে বরাদ্দের অর্ধেক, আবার কোথাও গরুর সেড নির্মাণের কোন বালাই নেই।
ছিলিমপুর গ্রামের সুফলভোগী জর্জ কুজুরের পুত্র ফারান্সিস কুজুর (৩০), পিউস টপ্যর পুত্র স্বপন টপ্য (৪২), পাসকাল টপ্যর পুত্র সিলিউস টপ্য (২৮), মাংরা টপ্যর পুত্র পাছকাল টপ্য খালিশা গ্রামের জর্জ কুজুরের পুত্র ফারান্সিস কুজুর (৩০), ছানি মিনজির পুত্র রবিন মিনজি (৪০), বুদুয়া আগষ্টিনের পুত্র বেনেদী কুজুর (৩২), বিরসা কুজুরের পুত্র শ্যামল কুজুর (৪০) দমনি কুজুরের পুত্র সুবল কুজুর (৩২) ও জোহান মিনজির পুত্র পাসকাল মিনজি এ প্রতিবেদককে জানান, আদিবাসী নেতা আগষ্টিন মিনজি উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগের বস্কে ম্যানেজের কথা বলে আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আমরা ধার-দেনা ও সংসারের মূল্যবান জিনিস বিক্রি করে সরকার প্রদত্ব সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য প্যাকেজভিত্তিক এই অনুদান পেতে সেই টাকা দিয়েও দিয়েছি (ভিডিও সংরক্ষিত)।
এদিকে আদিবাসী ঐ নেতার নিকটাত্মীয় না হওয়ায় এবং ধায্যকৃত টাকা দিতে না পারায় খালিশা গ্রামের ইলিয়স খালকোর অসহায় পুত্র নির্মল খালকো (৪৩), মাইকেল খালকো (৪৫), মুর্সেস মিনজির স্ত্রী ফাতেমা রাণী হাসদা, ভোতা কেরকাটার পুত্র সোমরা কেরকাটা (৪৫), বিরসা কেরকাটা (৫০) তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
এ বিষয়ে আদিবাসী নেতা আগষ্টিন মিনজি প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন।
কেন টাকা নেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মুখে কুলুপ এঁটে দেন।
এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, টাকা লেন-দেনের বিষয়টি আমার অজানা, কেউ অভিযোগ করলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সঠিকভাবে তদারকি করা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি অফিসের লোকবল সংকটকে দায়ী করেন।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন