রংপুরের পীরগঞ্জে বাণিজ্যিক ও অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

ভৌগোলিক ও উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে পীরগঞ্জে কৃষকদের পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে। অন্য ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি শত শত কৃষক পান চাষে জড়িয়ে পড়ছে। পানের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এ অঞ্চলে পানের বরজ গড়ে তুলেছেন।
উচ্চ মূল্যের বাণিজ্যিক ও অর্থকরী ফসল হিসেবে পান করে অনেকেই স্বাবলম্বী। পান চাষে এলাকার মানুষের মাঝে সুখ-দঃখের নানা গল্প-কাহিনি মিশে আছে।
আতিথিয়েতার অন্যতম উপাদান হচ্ছে পান- সুপারি। যেকোন অনুষ্ঠান শেষে পান-সুপারি সরবরাহ করা যেন গ্রামাঞ্চলে এক রকম ভদ্রতা। এমনকি কারো বাসাবাড়ীতে বেড়াতে গেলে আপ্যায়নের মতো কোনকিছুই না থাকলেও পান-সুপারি দিয়েই অতিথি সেবা করা হয়। এছাড়া বিয়ে, আকিকাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়া-দাওয়া শেষে পান-সুপারী সরবরাহ না করলে অনেকটাই অপূর্ণতা থেকে যায়।
পান চাষকে কেন্দ্র করে উপজেলায় অনেকগুলো হাট-বাজার গড়ে উঠেছে। পানের ক্ষেতকে স্থানীয়ভাবে ‘পান বরজ’ বলা হয়। চাষিরা বরজ থেকে পান তুলে বাজারে বিক্রি করেন। বর্তমানে ওই সব হাটবাজারে প্রতি বিড়া (৮০ টি) পান আকার ভেদে ৮০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা এমনকি রাজধানী ঢাকা থেকেও পান সংগ্রহের জন্য আসেন পান ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া বাজারগুলোতে চাষিদের কাছ থেকে আড়তদাররা পান কিনে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠান।
উপজেলার অধিকাংশ পানের হাটবাজারগুলো বসে সূর্যোদয়ের পূর্বে ঠিক কাক ডাকা ভোরে। তাই চাষিদের একদিন আগেই বরজ থেকে পান তুলে বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখতে হয়। দুর দূরান্তের ব্যবসায়ীরা পান সংগ্রহের জন্য যথা সময়ে বাজারে আসেন।
দেশের নানা প্রান্তে পানের চাষ হলেও পীরগঞ্জ অঞ্চলের পানের কদর প্রায় সারাদেশে। আকারে বড়, ওজনে ভালো ও সুন্দর রং হওয়ায় চাহিদাও বেশী। পানে কাঁচা পয়সা আসে। আর এই আশায় অনেকে পান বরজ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার পীরেরহাট, টুকুরিয়া, খালাশপীর, চতরা, বালুয়া, মাদারগঞ্জ, শানের হাট ও চৈত্রকোল এলাকায় অন্তত আড়াই শতাধিক পান বরজ রয়েছে। তাদেরই একজন চককৃষ্ণপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রায় বছর তিনেক আগে ধারদেনায় ১৫ শতক জমিতে পান বরজ লাগান।
প্রথম বছরেই আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষ করে ধারদেনা পরিশোধসহ বরজের পরিধি বাড়িছেন। তিনি এখন স্বাবলম্বী। মাধবপুর গ্রামের রজ্জব আলী বলেন, গত রমজান মাসে পানের দাম খুবই কম ছিল। ফলে ভীষণ হতাশায় ভুগছিলাম কিন্তু বর্তমান পানের দাম বাড়তে শুরু করেছে। হাজিপুর গ্রামের পান চাষি মোস্তাফিজার জানান, সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে পীরগঞ্জের পান শুধু দেশেই না বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান বলেন, পান শুধু অর্থকরী ফসলেই নয়, উচ্চ মূল্যের বাণিজ্যিক ফসলও বটে। পান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ পান উৎপাদনে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকে কৃষি অফিস।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন