‘রাজউক প্রভাবশালীর একটি অবৈধ ভবন ভেঙে দেখাক’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, সাধারণ নাগরিকরা বিশ্বাসও করে না অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবন ভেঙে রাজউক নতুন শহর উপহার দেবে। কিন্তু রাজউক একটা কাজ করতেই পারে, প্রতীকী অর্থে প্রমাণ করে দিক একজন সর্বোচ্চ প্রভাবশালীর দ্বারা অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবনটি ভেঙে ফেলুক। তাহলেই বুঝবো রাজউকের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা রয়েছে।
রোববার রাজধানীর কলাবাগানের ইয়াকুব সাউথ সেন্টারে স্টেট ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘অগ্নিকাণ্ড : কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব একথা বলেন।
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, রাজধানীতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সাড়ে ৫ হাজার ভবন। রাজধানীর এসব অবৈধ ভবন ভাঙার কি ক্যাপাসিটি রয়েছে রাজউকের? ভেঙে সেখানে নতুন করে গড়ার সাধ্য কি আছে? ভাঙতে গেলেও তো সেখানে যে ময়লা হবে তার ডাম্পিং কোথায় করবে? এটা তো অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু এই ভবনগুলো তো একদিনে গড়ে ওঠেনি। আইন অমান্য করে কেউ না কেউ তো এই ভবনগুলো অবৈধভাবে করেছি। অন্য কোনো দেশের নাগরিক করেনি। আমাদের নাগরিকরাই করেছি। উচিত ছিল ভবনগুলো নির্মাণ হওয়ার সময় বাধা দেয়া ও আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। আজকে এই ভবনগুলো যদি ভাঙতে চাই তা তো অসম্ভব।
তিনি আরো বলেন, এই যে সমস্যা তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা, অবহেলা আর অসক্ষমতার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে। আজ রাজউক এই সাড়ে ৫ হাজার ভবন ভাঙবে- এটা সাধারণ নাগরিকরা বিশ্বাসও করে না। কিন্তু দু-একটা প্রভাবশালীর অবৈধ ভবন ভেঙে তো রাজউক প্রমাণ দিতেই পারে যে তারা পারে।
মেয়র বলেন, ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। ঢাকায় প্রতিদিন নতুন মানুষের আগমন ঘটে ৬ হাজার। ঢাকার মধ্যে পুরান ঢাকা আরও বেশি ঘনবসতি পূর্ণ। ঢাকার প্রবৃদ্ধি উল্লেখজনক হারে বাড়ছে। কিন্তু অনেকেই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত নন।
তিনি বলেন, সচেতনতা সবার জন্যই। সমাজের অনেক মানুষ রয়েছে শিক্ষিত দামি গাড়িতে ঘুরছে। কিন্তু অসচেতন মনে পানির বোতল, ব্যবহৃত টিস্যু রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে যদি বোধ খুঁজে না পাই তাহলে অর্ধশিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত মানুষকে দোষ দিয়ে কি লাভ?’
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র খোকন বলেন, অধিকতর সেবা ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং সেবা সর্বস্তরে পৌঁছে দিতেই ২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত করা হয়। গত ৪ বছরে আমি চেষ্টা করেও ৬০ শতাংশ জনবলের অভাব পূরণ করতে পারিনি। কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আজ ২০১৯ সাল চলছে, আশ্চর্য হলেও এটাই সত্যি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আমাদের সে জনবলের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, চুরিহাট্টায় আগুনের পর বলা হলো, সিটি কর্পোরেশন কেন মামলা করলো না। যৌক্তিক কথা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতায় সেটা নেই। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা ও দোকান করার কারণে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারে সিটি কর্পোরেশন, মামলা করতে পারে না।
গোলটেবিল আলোচনায় আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেইন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন হোসাইন, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান, বাংলাদেশ অ্যাসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ পলাশ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. কামরুজ্জামান মজুমদার, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, ঢাবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান হাবিব সানা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন