রাজধানী রক্ষায় সেনা তলব, কোন পথে পাকিস্তান?

পানামা পেপার কেলেঙ্কারি নিয়ে টালমাটাল পাকিস্তান ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক, যার মধ্যে দেড় শতাধিকই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। শনিবার রাজধানী ইসলামাবাদ রক্ষায় সেনাবাহিনী তলব করা হয়েছে। যদিও রোববার সকালেও সড়কে কোনো সেনা সদস্য দেখা যায়নি।
.
তবে বিক্ষোভ থেমে নেই। রাজধানী ছাড়াও লাহোর, করাচি, গুজরানওয়ালা, ফয়সলাবাদসহ আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। এসব শহরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১১১ সেনা ব্রিগেডের পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রাজধানীতে মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছে।

পরিস্থিতি সহসা নিয়ন্ত্রণে না এলে ফল খারাপ হবে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন। খবর: ডন, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, রয়টার্স, বিবিসি।

আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে গত ৬ নভেম্বর থেকে বিক্ষোভ করে আসছেন পাকিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন তেহরিক-ই-লাবাইকের কর্মীরা। তার অপসারণের দাবিতে তখন থেকেই তারা রাজধানীর ফাইজাবাদ মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী।

স্বল্পপরিচিত ইসলামপন্থী এই সংগঠনের কর্মীদের বিক্ষোভ লাহোর, করাচি, গুজরানওয়ালা, ফয়সলাবাদসহ আরো কয়েকটি শহরেও চলছে, যেখানকার সংঘর্ষেও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

তবে গতকাল শনিবার রাজধানীর ফাইজাবাদ থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৬ জন নিহত ও ২ শতাধিক মানুষ আহত হন। এ সময় আইনমন্ত্রীর বাড়ি ভাংচুর করে বিক্ষোভকারীরা। যদিও সে সময় মন্ত্রী বা তার পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।

প্রাদেশিক উদ্ধার দফতরের মুখপাত্র দীবা শাহনাজ জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোকে সংঘর্ষের ঘটনার সরাসরি সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রথমদিকে সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব হলেও পরে তাও সরকার বন্ধ করে দেয়।
ইসলামাবাদ পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র জানান, হতাহত ব্যক্তিদের পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স নামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩৭ জনই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের একজন মুখপাত্র।

নির্বাচনে প্রার্থীদের নেওয়া শপথের একটি অংশে ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’ অংশটি বাদ পড়ার পর আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ইসলামপন্থীরা। তাদের অভিযোগ, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জন্য সুবিধাজনক ওই শপথে পরিবর্তন আনা ব্লাসফেমির শামিল। যদিও এ ঘটনা একজন ক্লার্কের ভুলে হয়েছে জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন জাহিদ হামিদ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসীকে ফোন করে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া জাতীয় স্বার্থে পরিস্থিতি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ মোকাবিলা করার অনুরোধ করেছেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর এক টুইট বার্তায় এ কথা জানিয়েছেন।

হঠাৎ করে এই সহিংস বিক্ষোভকে আগামী বছর হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএএল-এন) জন্য বড় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

অবশ্য আদালতের রায়ে পানামা পেপারস কেলেঙ্কোরিতে ফেঁসে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে হারিয়ে দলটি ধুঁকছে। মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছে দুর্নীতির দায়ে অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকে বাধ্যতামূলক মেডিকেল ছুটিতে যাওয়া।

পাকিস্তানের ৭০ বছরের ইতিহাসে কোনো নির্বাচিত সরকারই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। যেমনটি সেনা প্রশাসনের সঙ্গে জড়িয়ে নওয়াজ শরীফও পারলেন না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সিভিল প্রশাসন যদি দ্রুত এই সহিংস বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে এবং জনদুর্ভোগ আরও দীর্ঘ হয়, তাহলে আবারও সেনাবাহিনী দেশটির লাইম লাইটে চলে আসতে পারে।

দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আশকারী বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অনাস্থা জানিয়ে দিয়েছে। এখন এই ক্ষোভ প্রশমন না করলে হয়তো সরকারই অন্য কাউকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেবে।’

আরেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার ইমতিয়াজ গুল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে এই ইস্যুতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হলে তার চড়া মূল্য সরকারকেই দিতে হবে। এখন দেখার, সরকার এ নিয়ে কিভাবে খেলেন। সত্যিই পরিস্থিতি এখন অগ্নিগর্ভ।’