রাজধানীতে চুরির অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন মন্দিরের সেবায়েত

মন্দিরে চুরির অভিযোগ এনে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করা হবে ৬৫ বছর বয়সী সেবায়েত পরীক্ষিত দাসের। রাজধানীর মিরপুরের কাফরুল থানা এলাকায় কেন্দ্রীয় মন্দিরের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এমন কথা শুনে মাথা নিচু করে বারবার তাদের পা জড়িয়ে ধরে মাপ চান মন্দিরটির সেবায়েত (কেয়ারটেকার) পরীক্ষিত দাস। এরপরও মন গলেনি নেতাদের। এমন অপমান-অপদস্ত হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে তিনি কীভাবে মুখ দেখাবেন! কোথায় গিয়ে ঠেকবে তার সম্মান!

সবশেষ ওই সেবায়েত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আত্মহত্যার প্ররোচনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। সোমবার (২৯ আগস্ট) দিনগত রাতে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার (৪৬), সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা (৫৩) ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকার (৩৫)।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, গত ১৬ আগস্ট কাফরুলের মন্দিরের ভেতরেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সেবায়েত। পরে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার বর্ননা দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ওই সেবায়েত কাফরুল কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রায় ছয় বছর ধরে কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৫ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি ব্যাগ নিয়ে মন্দির থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। ওই ব্যাগে মন্দিরের ফল ছিল। এমন সময় ফলগুলো চুরির অভিযোগ তোলেন মন্দিরের সভাপতি বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সাহা ও দপ্তর সম্পাদক বাদল সরকার। পরদিন সকালে প্রকাশ্যে সালিশ বসিয়ে বিচার করার হুমকি দেওয়া হয় তাকে।

মন্দিরের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজের বরাত দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, সিসি ফুটেজে দেখা যায়, পরীক্ষিত দাস বের হচ্ছেন। এ সময় বিপ্লব, সুমন ও বাদল তাকে বাধা দেন। তারা হাত নাড়িয়ে কথা বলছেন পরীক্ষিত দাসের সঙ্গে। একপর্যায়ে পরীক্ষিত দাস তাদের একজনের দুই পা জাড়িয়ে ধরেন। পরে উঠে ওই ব্যক্তিকে বুকে আঁকড়ে ধরেন তিনি। ভিডিওতে স্পষ্ট, তিনি বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে অপর দুজনেরও পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চান পরীক্ষিত দাস।

পরে তারা পরীক্ষিত দাসকে রেখে চলে যান। এরপরই তিনি মন্দিরে দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির রেলিংয়ের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরদিন সকালে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে কাফরুল থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ছেলে ভক্ত দাস বাদী হয়ে কাফরুল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। সে মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় আরও কোনো কারণ রয়েছে কী না তা নিয়ে তদন্ত চলছে।