রাজধানীসহ সারাদেশে ঝড়-শিলাবৃষ্টি, নিহত ৬

রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার (৩০ মার্চ) ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। শিলাবৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে সিলেটে দুই জন এবং মাগুরা, যশোর, পাবনা এবং দিনাজপুরে একজন করে মোট ছয় জন নিহত হয়েছে।

সিলেট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সিলেটের ওসমানীনগরের দশহাল গ্রামে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরের টিনের আঘাতে সাবিয়া বেগম (৪৫) এবং উমরপুর ইউনিয়নে ঝড়ের সময় পানিতে ডুবে হাসান আহমদ নামে ১৬ মাস বয়সী এক শিশু মারা গেছে। শুক্রবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে।

ক্ষতিগ্রস্ত ফসলওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঝড়ে নির্মাণাধীন একটি টিনশেড ঘরের টিন উড়ে গিয়ে সাবিয়া বেগমের গলায় লাগলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এছাড়াও ঝড়ের সময় পানিতে ডুবে হাসান নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

ইউএনও আরও জানান, ঝড়ে ওসমানীনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদেরকে ত্রাণ দেওয়া হবে।

মাগুরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মাগুরায় বিকালে কালবৈশাখী ঝড় এবং শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে আকরাম হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এছাড়া ঝড়ো বাতাসে গাছপালা এবং অন্তত ২০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বড় বড় আকারে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় সদর উপজেলার ডহরসিংড়া গ্রামের আকরাম হোসেন ক্ষেতে কাজ করা অবস্থায় শিলাবৃষ্টির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন।

যশোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে লাইজু (১৭) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও দুই জন।

অভয়নগর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই শামসুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঝড় বন্ধ হলে ফের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হওয়া মাত্র হাইভোল্টেজ তারের সঙ্গেজড়িয়ে থাকা গাছের ডাল ও তারের মধ্যে অগ্নিসংযোগ ঘটে। ওই তার ছিঁড়ে গিয়ে ফুটপাতে হেঁটে যাওয়া প্রেমবাগ গ্রামের মোস্তাহার শেখের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লাইজু ও তার বান্ধবী ঐশি এবং অপর এক পথচারী ফাতেমা বেগম স্পৃষ্ট হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে লাইজুর মৃত্যু হয় এবং তার বান্ধবী ঐশি ও ফাতেমার শরীর ঝলসে যায়। আহতদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পাবনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পাবনায় শিলাবৃষ্টিতে জমেলা খাতুন নামে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছে। নিহত গৃহবধু জমেলা খাতুন ঈশ্বরদী লুক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত দেলবার হোসেনের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু আগে ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে জমেলা খাতুন বাড়ির পাশে লিচু বাগানে ঝরে পড়া পাতা কুড়াতে যান। এ সময় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হলে তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে হয়ে লিচু বাগানে পড়ে যান। বৃষ্টি শেষে স্থানীয়রা লিচু বাগানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে আনার পর স্থানীয় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ছাড়া পাবনার সুজানগর ও চাটমোহর উপজেলায় শুক্রবার দুপুরে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বড় বড় আকারের শিলার আঘাতে শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দিনাজপুরে পার্বতীপুরে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সৈয়দ আলী (৫৫) নামে একজন মারা গেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন অনেকেই। পাশাপাশি ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক আবু নঈম মো. আবদুছ ছবুর শিলা বৃষ্টিতে একজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে জানান, নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২০ জনের মতো আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেও য়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক জানান, ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নবাবগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলায়ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের কাজ চলছে।