রায় আগেই লেখা, ‘প্রসহনের বিচার’ দরকার ছিল না : ফখরুল

দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে রায় আগেই লিখে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে বলে জাতীয় পার্টির দুই নেতার বক্তব্য ঊদ্ধৃত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রায় আগেই লেখা থাকলে বিচারের নামে প্রহসনের দরকার ছিল না।’

বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন ফখরুল। এই সংবাদ সম্মেলন চলাকালে খালেদা জিয়া ছিলেন পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে গত ১৬ জানুয়ারি। এখন চলছে আসামিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন। আর আজকের মধ্যেই এই যুক্তি শেষ করতে বলেছেন বিচারক। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মামলার শুনানি। এরপর ঘোষণা হবে রায়ের তারিখ।

বিএনপি আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছে এই মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায় সরকার।

এর মধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি লালমনিরহাটে এক দলীয় আলোচনায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘এত দিন পরে খালেদা জিয়া বুঝতে পারছেন, আল্লাহ পাকের বিচারও আছে। সুবিচার আমাদের উপর হবে। ওনার (খালেদা) বেশি দিন নাই। ওনাকে জেলে যেতেই হবে।’

এর চারদিন আগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাপা নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘অপেক্ষা করুন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে।’

জাতীয় পার্টির দুই নেতার বক্তব্য উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘গত কয়েক দিনে সরকারের মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির সদস্য এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এই অবৈধ সরকারের বিশেষ দূত হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে। তাহলে দেশনেত্রীর মামলার রায় পূর্বেই নির্ধারিত ‘

‘এই অবৈধ সরকার পূর্বেই রায় লিখে রেখেছেন। তবে এই বিচারের প্রহসনের কোনও প্রয়োজন ছিল না। দেশে যে আইনের শাসন নেই-ন্যায় বিচার সুদুর পরাহত সেটাই প্রমাণিত হলো। বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই।’

জাতীয় পার্টির দুই নেতার বক্তব্যকে ‘আদালত অবমাননা’ মনে করেন ফখরুল। আর তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি কেন সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।

খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলা হয়েছিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। প্রায় ১০ বছর মামলাটির শুনানি চলছে বিচারিক আদালতে। এই সময় দেড়শরও বেশিবার নানা আবেদন নিয়ে বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা গেছেন উচ্চ আদালতে। তবে প্রতিটি আবেদনই ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে সেখান থেকে।

তবে ফখরুল দাবি করেছেন, এই মামলাটি শেষ করা হচ্ছে ‘নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে মামলা শেষ করার প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে, এই সরকার বেগম জিয়াকে ভয় করে বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়।’

খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তারও নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘যেভাবে পুলিশ-র‌্যাব দিয়ে আদালত ও আদালত সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখে তাতে মনে হয় কোন সামরিক শাসনের অধীনে সামরিক আদালতে এই বিচারকার্য চলছে।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ছাড়াও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে আরও একটি দুর্নীতির মামলা চলছে একই আদালতে। এটিরও বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুটি মামলা ছাড়াও বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে এখন চলছে ১৪টি মামলা এবং দুটি পিটিশন।

খালেদা জিয়ার মামলার নাম উল্লেখ না করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান ফখরুল।

‘নির্বাচন করতে হলে রাজনীতির মাঠকে সমান্তরাল করতে হবে। সমস্ত মামলা তুলে নিতে হবে। বিরোধী দলকে মামলা-হামলার মাধ্যমে সমান্তরাল হতে পারে না।’

পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘বলপূর্বক’ দেশ থেকে বহিষ্কার ও পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগও আনেন ফখরুল। বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শেষবারের মতো নিঃশেষ হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের আচরণবিধি সরকারের ইচ্ছা মতোই হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে।’

‘বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরানোর চক্রান্ত’

দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের সাজা হলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্যতা থাকে না। বিএনপির অভিযোগ খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে সরকার তাকে এবং বিএনপিকেই নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের পূর্বেই বিরোধী দলকে মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করছে।’

‘সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য যখন সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ সমান্তরাল মাঠ তৈরি করা প্রয়োজনীয়তা বেড়ে চলেছে, তখন ক্রসফায়ার, গুম, খুন, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, দমন, নির্যাতন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে সরকার।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।