‘রায় নিয়ে আ’লীগ যা করছে তা আইনের শাসনের বিরোধী’
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলছেন বা করছেন তা আইনের শাসনের বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
এদিন সকাল এগারোটায় সদ্য কারামুক্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুকে সঙ্গে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও বিশেষ মোনাজাত করেন মির্জা ফখরুল। পরে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, হাবিবউন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর সরফত আলী সপু, হারুন অর রশিদ, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, গোলাম মাওলা শাহীন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ছাড়াও মঞ্জুরুল আজিম সমুন, মাহফুজুল হক জাবেদ, মাসুদ রানা, আমির হোসেনসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তিন মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালতের জামিনে ১৮ আগস্ট বরকত উল্লাহ বুলু কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে ১৮ মে নাশকতার ১৩ মামলায় বুলু আত্মসমর্পণ করলে জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান আদালত।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ যে ধরনের কথা-বার্তা বলছে এবং তারা যে কার্যক্রম করছে আমি মনে করি তা আইনের শাসনের বিরোধী ও আদালত অবমাননার শামিল।
প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে তাদের প্রত্যেকটি নেতা যে অশ্লীল ভাষায় কথা বলছেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এর মাধ্যমে আদালত অবমাননা করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে একটাই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নষ্ট করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। যেটা এদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, এ হীন চক্রান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি সংগ্রাম করবে, লড়াই করবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে এটা আমাদের শপথ।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ক্ষমতায় থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে তাদের (সরকার) পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর বিএনপি যে স্বপ্ন দেখেছিল সেটি উল্টে গেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা কি বলছেন তারা নিজেরাই জানেন না।
মূল বিষয়টা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার কিভাবে দেশ চালাচ্ছে এ রায়ের মাধ্যমে তাদের আসল চেহারা পরিষ্কার বেরিয়ে গেছে। জনগণও সেটা বুঝে গেছে। এ কারণে তারা এসব অমূলক কথাবার্তা বলছেন।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের আলোচনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এটা কোনোদিন জীবনেও শুনিনি যারা প্রশাসনে আছেন, দেশ শাসনে যারা আছেন, কোনো একটা রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলাপ করা এমন কোনো দৃষ্টান্ত বোধহয় কোথাও নেই। সুতরাং এটা বলতে হবে তারা বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার জন্য চেষ্টা করছেন ও প্রধান বিচারপতিকে প্রভাবিত করার জন্য চেষ্টা করছেন। এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। তারা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেশের ভবিষ্যতের জন্য এটি অত্যন্ত কলঙ্ক বলে মনে হবে।
নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) তার বক্তব্যেই বলে দিয়েছেন এ সংলাপে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না। কারণ এ সংলাপকে তারা বলেছেন এটা তাদের দেখার দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সংলাপ হচ্ছে না, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হচ্ছে। এখানে মূল যে সংকট রয়েছে, তা সমাধানে এ সংলাপ কোনো কাজ করবে না। অর্থাৎ সহায়ক সরকারের যে ব্যাপার এবং নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের যে বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটার বিষয়ে কোনো সমাধান দেবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন