রায়ের আগে মহাসড়কে পুলিশি তল্লাশি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতা, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে কঠোর অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে ঢাকাগামী পরিবহন এবং গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাত থেকেই এসব পথ দিয়ে যেন দেশের অন্যান্য স্থান থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।
ঢাকা-মাওয়া বাস পরিবহন মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আকবর বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে বাসগুলো চলাচল করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি মহাসড়কে থাকলেও যাত্রীরা সাধুবাদ জানিয়েছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অন্যান্য দিনের মতোই সবকিছু স্বাভাবিক গতিতেই চলবে। যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।’
র্যাব-১১ মুন্সীগঞ্জের কোম্পানি কমান্ডার ও সহকারী পরিচালক মো. নাহিদ হাসান জনি জানান, এরই মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে টহল চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
র্যাব-১১-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নাজমুল জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে র্যাবের অবস্থান রয়েছে। সন্দেহভাজন গতিবিধি এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন খান বলেন, ‘আজ ও আগামীকাল আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাওয়া চৌরাস্তা থেকে শিমুলিয়া ঘাটে অবস্থান করব। শতাধিক নেতাকর্মীর অবস্থানের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিহত করতে হবে।’
মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান রাজীব জানান, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ পথে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি যুবলীগের নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর সেতুর ঢালে অবস্থান করছে। যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই যুবলীগের এই কার্যক্রম।
কাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবেন বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ মামলার অন্যতম আসামি খালেদা জিয়া। অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এতিম তহবিল নামে নতুন একটি হিসাব খোলা হয় এবং বিদেশ থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা আসে ওই হিসাবে। পরে ওই তহবিল থেকে দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে স্থানান্তর করা হয়। অভিযোগ আনা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেখান থেকে আসামিরা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। মামলা দায়েরের ১৩ মাস পর ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদ।
এ মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়ে বিএনপি অভিযোগ করেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আদালতে হস্তক্ষেপ করেছে। সরকার রায় তৈরি করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে তারা। রায়ের আগে বিগত কয়েক দিনে কয়েকশ নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এ মামলাটি বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের হয়নি। ফলে এ মামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আদালত স্বাধীনভাবে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করেছে।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, নৈরাজ্য পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন