রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে সরকার
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের প্রস্তাবে সায় নেই সরকারের। এছাড়া এই সমস্যা সমাধানে চীনের একক সহায়তার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ দেওয়ার পক্ষে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে দেশটিকে এই বার্তাই দেওয়া হবে। সরকারের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, চীন বরাবরই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে দ্বিপক্ষীয়ভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর বহুপাক্ষিক চাপ সৃষ্টি না করে কেবল এককভাবে এই সমস্যা সমাধানে সহায়তা করারও পক্ষে চীন। কিন্তু চীনের এই দুই প্রস্তাবের কোনোটিতেই সায় নেই বাংলাদেশের।
এরআগে গতমাসে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দূত সান গোসিয়াং রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য মিয়ানমার সফরের পরে ঢাকায় আসেন। এ প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে দীর্ঘদিন মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করেছে কিন্তু সফল হয়নি।’
গত বছরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শুরু করলে বাংলাদেশ নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে বহুপাক্ষিক চাপ দিয়ে এ সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়।
চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াং তার সফরের সময়ে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের কথা বললে ঢাকা থেকে বলা হয়, এটি চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু মিয়ানমার সৎ ও বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেনি। এই প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের একক সহায়তার প্রস্তাবও বাংলাদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।’
জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা রেজ্যুলেশনে বিরুদ্ধে চীনের ভোট দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হবে কিনা, জানতে চাইলে সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনের এই ব্যবহারে বাংলাদেশ খুশি নয়। কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চীনকে বিষয়টি জানানো হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। চীনের সঙ্গেও আমরা এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছি। শনিবারের বৈঠকেও আমরা তাদের সহায়তা চাইব।’
উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। ছয় মাস আগে একবার তিনি এসেছিলেন। আমি বলেছি, ছয় মাস আগে আপনি যখন এসেছিলে, তখন চার লাখ (রোহিঙ্গা) ছিল, এখন এক মিলিয়ন হয়েছে। এটি হলো বাস্তবতা।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তিনি (চীনের দূত) বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার যে ইনটেনশন তাদের (মিয়ানমার), যে কমিটমেন্ট, সেটি আগের চেয়ে স্ট্রংগার। আমরা বলেছি, সেটি যখন ঘটবে, তখন দেখব।’
চীন দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমস্যার সমাধান চায় কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘তারা চায়, এটি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান হোক।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন