রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত গড়তে পেরেছে বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুতে সমালোচিত হলেও এখন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।তাঁরা মনে করছেন, বাংলাদেশ বিশ্ব মানবিক জনমত গড়েছে, পেরেছে বিশ্বকে অমানবিকতা অনুধাবন করাতে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা ও উদ্যোগের কারণে ইউএনএইচসিআর ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছে। ভারতের অবস্থান শুরুতে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থাকলেও তাতে পরিবর্তন এসেছে। ইতিমধ্যেই ত্রাণ পাঠিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন এবং বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন।
চীন এখনও মিয়ানমার সরকারের নীতির প্রতি সমর্থন দেখালেও তারাও ত্রাণ পাঠাচ্ছে বলে ঢাকায় সরকারি সূত্র থেকে জানা গেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্ব রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেছে এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের সমাধান ও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ অবশেষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে একটি মানবিক ঐক্য স্থাপনে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিশ্ব জনমতও গড়ে উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরুতে দ্বিধা থাকলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। আর এই স্পষ্ট অবস্থান নিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে জনমতের চাপ এবং দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম। মিয়ানমারকে ঘিরে চীন ও ভারতের যে কর্পোরেট স্বার্থ, সেখান থেকে তাদের অবস্থানেরও পরিবর্তন হচ্ছে জনমতের চাপে। ভারতের শিখ জনগোষ্ঠির একটি সংগঠন রোহিঙ্গাদের সাহায্য দিতে শুরু করেছে এরই মধ্যে।”
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সামনে বিশ্ব জনমত একটি সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিতরণ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের আস্থা আরো বাড়বে, যা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নির্ধারণ এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে। বাংলাদেশের এখন কাজ হলো রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা, যাতে মিয়ানমার ভবিষ্যতে এই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। মিয়ানমার আগেও এই জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে, আবারো যে করবে না, তা বলা যায় না।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা বিআইআইএসএস-এর চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রথমদিকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং কৌশল অতটা দৃশ্যমান ছিল না। ফলে অনেকে মনে করেছেন বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট নয়। এখন তা দৃশ্যমান হয়েছে এবং তার ফল পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে একমত হচ্ছে। বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যাকে মানবতার সংকট হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছে। তাই এখন সবাই এগিয়ে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ একটি বড় ধরনের অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে এখন কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে আরো জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে এবং মানবতার পক্ষে ঐক্যমত সৃষ্টি করে বিশ্বের যে আস্থা অর্জন করেছে, তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।” সূত্র : ডয়চে ভেলে
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন