রোহিঙ্গা সংকট : নিরাপত্তা পরিষদের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের সহিংসতা নিয়ে আলোচনা করতে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। এছাড়াও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাসের বক্তব্য শুনবেন।

মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যু নিয়ে নিউইয়র্ক সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মিয়ানমারও বক্তব্য দিতে পারে। বাংলাদেশও মুক্ত বিতর্কে অংশ নেবে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব পেশ করবেন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমারে সামরিক দমনপীড়নের কারণে চার লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং অপর চারটি দেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিষদ এ বৈঠকে করতে যাচ্ছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এসব লোকের অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম।

জানা গেছে, নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতা আছে নিরাপত্তা পরিষদের। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব পালন মিয়ানমারের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে চীন ও রাশিয়ার মতো স্থায়ী সদস্যরা কোনো প্রস্তাবে ভেটো দিলে তা বাতিল হবে যাবে। তবে এবার অপর তিন সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য মিশর, কাজাখস্তান, সেনেগাল ও সুইডেনও আবেদন জানায়। দেশগুলোর কোনটিই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য নয়।

মিয়ানমার সরকার ও দেশটির নিপীড়ক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ আশা করছেন সবাই। কিন্তু চীনসহ দু-একটি দেশের ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে এ প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে এই নিয়ে এক মাসে তিন দফা বৈঠক হতে যাচ্ছে। এর আগেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুই দফা আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এতে দীর্ঘ নয় বছর পর নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এক বিবৃতি দেয়া হয়। বিবৃতিতে রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে অনেকেই নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করছেন যে তারা গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

জাতিসংঘ মিয়ানমারের এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত সপ্তাহে আবারো এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান সংখ্যালুঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাস’ চালানোয় মিয়ানমারকে দায়ী করে এ গণহত্যার কঠোর নিন্দা জানান।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি ও সরকারি দপ্তরে কথিত রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে এ সামরিক অভিযান শুরু করা হয়।