রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ব্যর্থ : যুক্তরাষ্ট্র

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন অ্যাম্বাসেডর নিক্কি হ্যালি নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া ভাষণে বলেছেন: মিয়ানমার সঙ্কটে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে জাতিসংঘ। এই পরিষদকে অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে সেনাবাহিনীকে দায়ী করতে হবে এবং অং সান সু চিকে তার দেশে হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকৃতি দিতে হবে। এ বিষয়ে আর কোন অজুহাত নয়।

এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে মিয়ানমারে এখনও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি উল্লেখ করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন: আমাদের হিসাবে বহু রোহিঙ্গা বন্যা এবং ভুমিধ্বস প্রবণ এলাকায় রয়েছে। অরক্ষিত এই রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তর প্রয়োজন। তাদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এমনটি জানান তিনি।

গত আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পরও রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরতে না পারায় এখনও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক সংকট চলছে।

গ্রান্ডি বলেন, রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার কারণ এখনও স্বীকার করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা এবং গত কয়েক দশক ধরে তাদের অধিকার অস্বীকার করে আসার যে প্রবণতা, সেই পরিস্থিতিরও বাস্তবসম্মত কোন উন্নতি আমরা এখন পর্যন্ত দেখিনি।

গ্রান্ডি আরও বলেন, যে রাখাইনে শত শত গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনারা, সেখানে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’এর প্রবেশের অনুমোদন নেই। মানবিক সহায়তা পৌঁছানো অত্যন্ত সীমিত করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের কেন্দ্রেও আমাদের প্রবেশ সংকুচিত করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, শরণার্থীদের স্বাধীন তথ্য সরবরাহ এবং প্রত্যাবাসনের সময় রোহিঙ্গাদের সহয়তায় ইউএনএইচসিআর এর উপস্থিতি এবং রাজ্য জুড়ে তাদের প্রবেশাধিকার প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন গ্রান্ডি।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার কথাও বলেন গ্রান্ডি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জায়গা দেওয়ার জন্য বাংলদেশের জনগণের প্রশংসা করেন তিনি। মার্চে বর্ষার মৌসুম শুরুর আগেই রোহিঙ্গাদের অবস্থার উন্নতির জন্যও সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, আমরা এখন সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা করছি। আমাদের হিসাবে বহু রোহিঙ্গা বন্যা এবং ভুমিধ্বস প্রবণ এলাকায় রয়েছে। অরক্ষিত এই রোহিঙ্গাদের জরুরি ভিত্তিতে স্থানান্তর প্রয়োজন। তাদের জীবন অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে।

গ্রান্ডির বক্তব্যের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন অ্যাম্বাসেডর নিক্কি হ্যালি বলেন, মিয়ানমার সঙ্কটে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এখন পর্যন্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে জাতিসংঘ। এই পরিষদকে অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে সেনাবাহিনীকে দায়ী করতে হবে এবং অং সান সু চিকে তার দেশে হওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকৃতি দিতে হবে। এ বিষয়ে আর কোন অজুহাত নয়।

রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে না পরায় মিয়ানমারের নেত্রী এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চির সমালোচনা করেন হ্যালি।

নিক্কি হ্যালি আরও বলেন, যা কিছু হচ্ছে তার জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করা হলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য। হ্যালি এবং আরও কয়েকজন জাতিসংঘের অ্যাম্বাসেডর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি বিশেষ করে উল্লেখ করেন। রাখাইনের একটি গণকবরের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে মিয়ানমারের অ্যাম্বাসেডর এ বিষয়ে বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে তার দেশ সম্মান করে। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার নীতি লঙ্ঘণের জন্য ওই দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।