লালমনিরহাটে কালীগঞ্জে পাচারকালে ট্রাকবোঝাই সরকারি চাল জব্দ

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লুট হওয়া লালমনিরহাটে কালীগঞ্জ উপজেলায় অবৈধভাবে সরকারি চাল পাচারকালে সাড়ে ২৪ মেট্রিকটন চালসহ একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় ট্রাকচালক ও তার সহযোগীকে (হেলপার) ছেড়ে দিয়েছেন।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাত ১০ টার দিকে উপজেলার তুষভান্ডার রওশন ফিলিং স্টেশনে স্থানীয়রা আটক করেন। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম ট্রাকসহ সরকারি চাল জব্দ করেন।

এর আগে আগে গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সরকারি চাল নিয়ে উপজেলার ভোটমারী খাদ্য গুদাম খাদ্য পরিদর্শক গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম লাপাত্তা হোন । এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের ও তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাৎক্ষনিক অভিযানে গুদাম সিলগালা করা হয় এবং দুপুরে সুকানদিঘী এলাকার চালকল মালিক একরামুল হকের চাতাল থেকে ৩০ মেঃ টন চালও উদ্ধার করা হয়েছে। আর ট্রাকের সাড়ে ২৪ মেট্রিকটন চাল ইউনুস আলী আশরাফী বলে ট্রাক মালিক নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা খাদ্য পরিদর্শক (ওসি এলএসডি) ফেরদৌস আলম গতবৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোররাতের আঁধারে ২৫টি ট্রলিযোগে গুদাম থেকে চাল সরিয়ে ফেলেন। যার মূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকা। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার গুদামে অভিযান পরিচালনা শুরু করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম। এ সময় উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের সুকানদিঘী এলাকার চালকল মালিক একরামুল হকের গুদাম থেকে ৩০ মেট্রিক টন ওজনের ৬০০ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় গুদাম মালিক পলাতক থাকায় তাকে পাননি অভিযানিক দলটি। ওইদিন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে (ভারপ্রাপ্ত) সদস্য সচিব করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

এদিকে শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার। তদন্ত কমিটিও তদন্ত শুরু করেছে। একইসঙ্গে তছরুপকৃত চাল উদ্ধার ও লাপাত্তা গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় লাপাত্তা গুদাম কর্মকর্তা ফেরদৌস আলমকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা এনামুল হক। ওই ঘটনার পর কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যেক চালকল মালিক ও তাদের বাড়ি তল্লাশি অভিযান শুরু করেন। এরই মধ্যে খবর আসে রওশন ফিলিং স্টেশনে একটি ট্রাকে সরকারি চাল পাওয়া গেছে। খবর পেয়েই দ্রুত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটে যান। পরে ৪৯০ বস্তা অর্থাৎ সাড়ে ২৪ মেট্রিক টন জব্দ করেন।

ট্রাক মালিক লাভলু মিয়া বলেন, ৪৯০ বস্তায় ১০ হাজার টাকা ভাড়া করেন মেসার্স আশরাফী ট্রেডার্সের মালিক ইউনুস আলী আশরাফী। ভোটমারী থেকে চাল নিয়ে কাকিনার পাশে একটি চালকলে রাখার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ইউনুস আলী আশরাফী রংপুরে নিয়ে যেতে বলেন। এতে ট্রাক চালক রাজি না হয়ে তুষভান্ডার তেলের পাম্পে ট্রাকটি রেখে দেন। এসব অবৈধ জিনিস ছিল কিনা আমার জানা ছিল না। অবৈধ জেনে থাকলে কখনোই আমি গাড়িতে বহন করতাম না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম জানান, খবর পেয়েই দ্রুত ট্রাকসহ চাল উদ্ধার করে খাদ্য গুদামে রাখা হয়েছে। ২৫০ মেট্রিকটন চাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুত এই চক্রটিকে ধরা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে মেসার্স আশরাফী ট্রেডার্সের মালিক ইউনুস আলী আশরাফীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।