শক্তিমান ছড়াকার জগলুল হায়দারের জন্মদিন আজ
আধুনিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জনপ্রিয় ছড়াশিল্পী জগলুল হায়দারের ৫৪ তম জন্মদিন আজ। ১৯৬৫ সালের ৮ অক্টোবর জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমান সমসাময়িক খ্যাতিমান ছড়ার কবি জগলুল হায়দার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করে চলেছেন নিত্যনতুন বিষয় আর সময়কে ধারণ করে।
‘নতুন স্লোগান’, ‘ছাগলশুমারি,‘দলীয়করন’ ও ‘জার্নি’র মতো অসংখ্য পাঠকনন্দিত ছড়া লিখে তিনি পৌঁছে গেছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষতম স্থানে। দেশের জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনগুলো সমৃদ্ধ হয় তার শিশুতোষ, সমসাময়িক, রম্য এবং সিরিয়াস ছড়ায়। এছাড়া তিনি নিয়মিত লিখে চলেছেন কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ এবং সমকালীন বিষয়ের কলাম বয়ান। উত্তরাধুনিক ছড়া তাঁর নতুন সৃষ্টি। মডার্নিজমের মাধ্যমে কলুষিত করা সমাজকে তিনি এ ছড়ার মাধ্যমে কষাঘাত করেন।
জন্মদিন উপলক্ষে আজ (সোমবার) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ২/২সি বাবুই কার্যালয়ে শুভেচ্ছা আড্ডা এবং বাবুই থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রিয় ৫০ ছড়া বইয়ের পাঠ উন্মোচনের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভক্ত, বন্ধু-শুভাকাক্সীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। একইসঙ্গে ছড়াপাঠ ও গান করবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দেশবরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী ও ছড়াকার ফারুক হোসেনসহ সমকালীন ছড়াসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য লেখকগণ।
জগলুল হায়দার বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার। লিখেছেন অসংখ্য গান। তাঁর কথা ও সুরে মনির খানের গাওয়া ‘লক্ষ টাকায় খাট কেনা যায়-ঘুম কেনা যায় যায় কি বলো?’ শ্রোতা-বোদ্ধামহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এছাড়া, রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে তার কথা ও সুরে দ্রোহের গান ‘অ্যাগেইন স্টপ জেনোসাইড’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। জগলুল হায়দারের লেখা পথনাটক ‘নাড়াই’-এর এ পর্যন্ত ৮৫টি প্রদর্শনী হয়েছে। পেশায় প্রকৌশলী নেশায় ছড়াকার জগলুল হায়দারের বাবা মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী জি কে এম আবদুল লতিফ, মা জাহানারা বেগম। স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সুখের সংসার।
জগলুল হায়দার বাংলাদেশ ছড়া একাডেমির উদ্যোক্তা পরিচালক,সাহিত্য সংগঠন ম্যাজিক লন্ঠনের সম্পাদক, সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান মোমেনটামের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক, শিল্পঘর এর প্রধান সমন্বয়ক ও লিটলম্যাগ ধারাই এর সম্পাদক। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন রেবতী বর্মণ সম্মাননা স্মারক, ফুটতে দাও ফুল সাহিত্য সম্মাননা, শ্রীপুর সাহিত্য পুরস্কার, শহীদ সৈয়দ নজরুল সাহিত্য পদক, পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার, লেখারেখা পুরস্কার, সাহস সম্মাননা স্মারক, স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য সম্মাননা ইত্যাদী।
জগলুল হায়দারের ছড়াসমগ্র ছাড়াও প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০ টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- চুম্বক (অণুকাব্য), বাংলার মুখ বাংলার মিথ (ছড়া), টুইন টাওয়ার রুইন টাওয়ার (ছড়া), সুফিয়ানা, পলিটিকা, আন্তনেটের ডটকম (ছড়া), স্বাধীনতার কাব্যইতিহাস(ছড়া), সে কালের গল্প এ কালের ছড়া (গল্প ও ছড়া), অদ্ভুত বদ ভূত (ছড়া), মিট্টি মেধার কার্টুন ছড়া (ছড়া), ফাংকোলো (ছড়া), প্রিপেইড ভালোবাসা (অণুকাব্য), তা রা রা তা রা রা তারারে (কাব্যছড়া), পল্টনে পটকা (লিমেরিক), ভালোবাসার পয়জন (অণুকাব্য), রাজনীতি ভাঁজনীতি (ছড়া), স্বপ্ন সমান আকাশ আমার (কাব্যছড়া), জলটুপ শ্রাবণে (ছড়া), ভাবতে ভাবতে একটা ছেলে (কাব্যছড়া), উড়তে উড়তে একটা ঘুড়ি (কাব্যছড়া), অনার করলে অনার পাবি (ছড়া), পাওয়ার প্লে (উত্তর-আধুনিক ছড়া), বাংলাদেশের প্রেমের ছড়া (সম্পাদনা), বাংলাদেশের ভ্যালেনটাইন ছড়া (সম্পাদনা), ভালোবাসার একশ লিরিক ও বিকেল খেকো টাওয়ার।
জন্মদিনের অনুভূতি জানিয়ে ছড়াকার জগলুল হায়দার গণমাধ্যমকে জানান, এখন জন্মদিন আসলে মনে হয় বয়স আরো একবছর কমলো। আসলে জন্মদিন আর দুই-দশটা দিনের মতোই। আমার আব্বা ঘটা কইরা জন্মদিন পালন করতে দিতেন না। আম্মা অবশ্য বাসায় ভালোমন্দ খাবার রানতেন। বিয়ের পর আমার স্ত্রীও প্রতি জন্মদিনে তাই করেন। কেবলমাত্র ছড়া লিখে তারকাখ্যতি পাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য- আমি আসলে কিছু হওয়ার জন্য ছড়া লেখি নাই। এমনকি শুরুতে আমি ছড়াকার হমু, এই রকম কুনো ধারণাও ছিল না। মানুষ সময় আর সমাজের মন পড়ার একটা ক্ষমতা আল্লাহ বেশ ভালোই দিছেন আমারে। সেইটা ছড়া লেখায় কাজে দিছে। মানুষের সেই প্রত্যাশা আর সময়ের সেই ডাক আমার ছড়ায় কিছুটা হইলেও হয় তো উইঠা আসছে। তাতেই মানুষও উজাড় কইরা তাদের ভালোবাসা দিছেন। আর তাদের সেই ভালবাসাই হয় তো অনেকের চোখে তারকা খ্যাতি বইলা প্রতিভাত হইছে’ বলেও জানান জগলুল হায়দার।
জন্মদিন উপলক্ষে বরেণ্য এই ছড়ার কবির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন