শখের বসে প্রার্থী হয়ে তিনি এখন এমপি
কথায় আছে যে যায় বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে। কথাটি সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য- দুটি অর্থেই ব্যাহৃত হয়। কিন্তু গণফোরামের মোকাব্বির খান সৌভাগ্য নিয়েই নির্বাচনের আগে এই বঙ্গ দেশে এসেছিলেন। শখের বসে প্রবাস থেকে দেশে এসে এখন তিনি এমপি। এমন সৌভাগ্য ক’জনের আছে। শুধু কী তাই- মোকাব্বির সৌভাগ্য এনে দিয়েছেন তাঁর দল গণফোরামকেও। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরে গণফোরামের কেউ তাদের নির্বাচনী প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে এমপি হতে পারেননি। মোকাব্বিরই এখন সেই ভাগ্যবান। নির্বাচনের নানা আলোচনায় সিলেটে এখন তাই ‘টপ স্টোরি’ মোকাব্বির খান।
এবার সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন গণফোরামের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। সিলেটের এই আসনে বিএনপির প্রার্থী তাহসীনা রুশদীর লুনার মনোনয়নপত্র আদালত কতৃক বাতিল হওয়ার সুযোগে হঠাৎ প্রবাস থেকে এসে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে গেছেন তিনি। তার এমপি হওয়ার খবরে অবাক হয়েছেন সিলেটের সবাই। বলছেন, ভাগ্যই এমনটি করেছে। সাথে ছিলো বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আর প্রার্থিতা হারানো তাঁর স্ত্রী লুনার প্রতি সিলেট-২ আসনের ভোটারের তৈরি হওয়া আবেগ।
তবে এ কথা মানতেই হবে এমপি হওয়ার পেছনে ভাগ্যই মোকাব্বিরকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। মোকাব্বির নিজেও ভাবতে পারেননি এবার এমপি হয়ে যাবেন তিনি। শখের বসে প্রার্থী হয়েছিলেন। বিজয় আসবে না জেনে নিজের প্রার্থিতা বাতিল করতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই যে-ভাগ্য, তাই তো প্রার্থিতা বাতিলের শেষ দিনে সিলেটের রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে ১০ মিনিট দেরি হয়ে যায় তার। যে কারণে প্রার্থিতা আর বাতিল করা হয়ে ওঠেনি। এখানেই শেষ নয়, বিজয়ী হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না- এমন একটি ধারণা ছিল মোকাব্বির খানের নিজেরই। যে কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে না পেরে ফের চলে যান যুক্তরাজ্যে। যাওয়ার সময় ঐক্যজোট প্রার্থী লুনাকে সমর্থন জানিয়ে দেন মোকাব্বির।
এর মধ্যে ঘটে যায় অন্য নাটক। ইলিয়াস পত্নী লুনার প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে বসেন একই আসনের মহাজোট সমর্থীত জাতীয়পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া। তার অভিযোগ, আরপিও অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পর সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার বিধান থাকলেও তাহসিনা রুশদীর লুনা ৬ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি নেন। যে কারণে লুনার প্রার্থিতা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে অভিযোগ করেন এহিয়া। তার এ অভিযোগের রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। আর এতেই খুলে যায় মোকাব্বিরের ভাগ্য।
লুনার প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় সংকটে পরে ঐক্যজোট। কি করবে, কাকে সমর্থন দেবে- এমন ভাবনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন বিএনপিসহ ঐক্যজোটের নেতারা। হঠাৎ সবার খেয়াল হলো-গণফোরামের মোকাব্বিরের প্রার্থিতা বাতিল হয়নি। তাই তাকেই ডেকে পাঠানো হয়। যুক্তরাজ্য থেকে ভোটের সপ্তাহ দিন আগে তড়িঘড়ি করে দেশে ফেরেন মোকাব্বির। লুনাসহ বিএনপি-জামায়াত জোটের সবাই তাকে সমর্থন দেন। জানিয়ে দেয়া হয় গণফোরামের মাকব্বিরই ধানের শীষের প্রার্থী। যদিও ভোটে তাঁর প্রতীক ছিল উদীয়মান সূর্য। এবার নির্বাচনে সিলেট ২-এ আসনটি প্রথম থেকেই ধানের শীষের জোয়ার ছিল।
বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর বাড়ি এ আসনের বিশ্বনাথে। এমনেতেই ইলিয়াসের বেশ প্রভাব ছিলো বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর এবং বালাগঞ্জ উপজেলায়। নিখোঁজ হওয়ার পর এ আসনের মানুষের মধ্যে আলাদা এক সহানুভূতি তৈরি হয় ইলিয়াসকে ঘিরে। সেই আবেগে তাঁর স্ত্রী লোনা প্রার্থী হওয়ায় বেশ সুবিধাজনক একটি অবস্থান তৈরি হয় এ আসনে। সিলেটের সব আসনে সন্দেহ থাকলে সিলেট-২ আসনে লুনা জিতবেন এমন একটি আওয়াজ উঠে নির্বাচনের প্রথম থেকেই। জাতীয় পার্টির এমপি ইয়াহহিয়ার রিটের কারণে শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচন করা হয়ে ওঠেনি ইলিয়াসপত্মী লুনার। যে কারণে ভাগ্য খুলে যায় গণফোরামের মোকাব্বিরের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন