শতশত হজযাত্রীদের ক্যাম্পে রেখে পালিয়েছে এজেন্সির মালিকরা
কারো ভিসা হয়েছে, টিকিট হয়নি, আবার কারো ভিসা টিকিট কোনোটিই হয়নি- এমন শত শত হজযাত্রীদের ক্যাম্পে রেখে পালিয়েছে এজেন্সির মালিকরা। প্রতারিত এসব হজযাত্রীদের দীর্ঘশ্বাস আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্প এলাকা।
প্রতারিত হজযাত্রী আব্দুল আজিজ। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা বগুড়া থেকে ৮২ জন একসাথে এখানে এসেছি। এখন আমাদেরকে রেখে এজেন্সির মালিক পালিয়েছে। আমরা এখন কী করবো। বাবা যে ভাবেই হোক আমাদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। না হলে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
এমন আকুতি শুধ আব্দুল আজিজের একার নয়; তার মতো শত শত হজযাত্রী হজ ক্যাম্পের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এবছর ভিসা হওয়ার পরও বিমানের টিকিট না পাওয়া হজযাত্রীদের সংখ্যা বেশি। অনেকেই ভিসা নিয়ে গত ১০-১৫ দিন ধরে হজ ক্যাম্পে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আজ না, কাল। কাল না, পরশু- এভাবে অপেক্ষার প্রহর গুণে চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।
এখন শেষ দিকে অনেক এজেন্সির মালিক যাত্রীদের সাথে যোগাযোগ তো দূরে থাক অফিসে তালা দিয়ে পালিয়েছেন। আবার অনেক এজেন্সির মালিক মাঝে মাঝে মোবাইল করে এসব হজযাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন।
এদিকে এসব ভুক্তভোগী হজযাত্রীদের কোনো মৌখিক অভিযোগ নিচ্ছে না হজ অফিস। লিখিত অভিযোগ জমা নিলেও, অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত সমস্যা সমাধানে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
শুক্রবার রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পে সরেজমিনে ঘুরে ভোগান্তির শিকার হজযাত্রীদের আহাজারি আর কান্নার এমন চিত্র দেখা গেছে।
এখন পর্যন্ত ৬৪ টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে গাফিলতি ও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে হজ অফিস থেকে জানানো হয়েছে।
এদের মধ্যে অন্যতম হলো— আল বালাদ অভারসীজ, সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাদমান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আবকর হজ গ্রুপ, সাউথ এশিয়া ওভারসীজ, এম. এম. ট্রাভেলস, গুলশানএ মুহাম্মদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, সানজিদ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, হাসান অভারসীজ, নিবিড় হজ ওমরাহ এন্ড টুরিজম, এম সি ও ট্রাভেলস এন্ড টুরিজম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আল বালাদ অভারসীজ, সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সাদমান এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এই তিনটি এজেন্সির মালিক হলো মো. সালাম, আবু সাইদ, মো. সায়েম ও মাহবুবুর রহমান টিটু। এরা চারজনই আপন ভাই। এরা বিভিন্ন এজেন্সির নামে যাত্রী সংগ্রহ করে। প্রতিবছরই যাত্রীদের সাথে এমন প্রতারণা করে। এবারও কয়েকশ যাত্রী ক্যাম্পে রেখে সবাই পলাতক। মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী হজযাত্রীদের অনেকেই তাদের অফিসে গিয়ে তালাবন্ধ অবস্থায় পেয়েছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মো. আবু মালেক মৃধা তার স্ত্রীকে নিয়ে গত ৬ দিন ধরে হজ ক্যাম্পে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সমস্যারই সমাধান হয়েনি। তাদের ভিসা করিয়েছে সাইদ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামের হজ এজেন্সি। এই এজেন্সির আরো ২০ জন হজযাত্রী ভিসা পেয়েও বিমানের টিকিট না পেয়ে হজ অফিসের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
মো. আবু মালেক মৃধা বলেন, এজেন্সি থেকে আমাদের ফোন করে হজ ক্যাম্পে আসতে বলেছে। হজ ক্যাম্পে আসার পর তারা আর যোগাযোগ করছে না। বলছে আপনাদের টাকা আমরা পাইনি। আপনারা যে ভাবে পারেন চলে যান। আমরা কিছু জানি না। আমরা এখন কি করবো। আমরা তো এখন হজে যেতে না পাড়লে মানুষের মাঝে মুখ দেখাতে পারবো না।
বগুড়া থেকে গত ৭ দিন আগে হজ ক্যাম্পে এসেছে আব্দুল আজিজ, মোশারোফ হোসেন, আব্দুল কাইয়ুমসহ মোট ৮২ জন। এরা সবাই আবকর হজ গ্রুপের যাত্রী। এদের সবারই ভিসা হয়েছে কিন্তু বিমানের টিকিট হয়নি। কয়েকদিন ধরে এজেন্সির মালিক আর তাদের সাথে যোগাযোগ করছে না।
হজযাত্রীদের এতো অভিযোগ, তেমন কোনো সমাধানের উদ্যোগ নেই কেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বলেন, আমরা অভিযোগ জমা নিচ্ছি। আজও অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে। আজ আমরা অভিযোগকারীদের বিষয়ে বৈঠকে বসবো। তাদের সকলের সমস্যা সমাধান করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এখন ৬৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা প্রতারণার অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে। আমরা কি শাস্তির ব্যবস্থা করি তা আপনারাই দেখতে পারবেন। তবে দেশে ১৪’শ হজ এজেন্সির কোনো প্রয়োজন আছে কি না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।প্রতিবেদন পরিবর্তন-এর সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন