‘শবে বরাত’ মুক্তির রাত
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/download-900x450.jpeg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
আরবী শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। শবে বরাত ফারসি ভাষা থেকে উৎপত্তি। ‘শব’ অর্থ হচ্ছে রাত, ‘বরাত’ অর্থ হচ্ছে মুক্তি। অর্থাৎ শবে বরাত অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হচ্ছে ‘লাইলাতুল বারাআত’।
পবিত্র হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধ্যাধিক পরিচিত। শবে বরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময় রজনী।
এ রাতে মহান আল্লাহতায়ালা তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। পাপী বান্দাদের উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন- এ জন্য এ রাতকে শবে বরাত বলা হয়।
এই রাত সম্পর্কে পবিত্র সহিহ হাদিস যা সুনানে ইবনে মাজাহ এর ইকামাতুস সালাত অধ্যায়ে আবু মুসা আল আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মধ্য শা’বানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেন ও মুশরিক (আল্লাহর সাথে শিরককারী) এবং মুশাহিন (হিংসুক) ব্যতীতসকলকে ক্ষমা করে দেন।’
পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)।
মুফাসসিরিনগণ ব্যাখ্যা করেন যে, এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখান–এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কোরআন)।
হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বর্ননা করেন যে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা!
তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।
হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া–বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)।
পবিত্র হাদিস শরীফে আরো বলা হয়েছে যে, যখন শাবান মাসের পনেরতম রাত আসে, আল্লাহ আসমান-জমিনের দিকে তাকান এবং বলেন: ‘হে আমার বান্দারা! কেউ মাফ চায়, আমি তাকে মাফ করি, কেউ রিজিক চায়, আমি তাকে রিজিক দিই।'”
(শুআবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৫২৭) এ হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, তাদের দুঃখ দূর করেন এবং তাদের জীবনের সুখ-স্মৃতি রচনা করতে সাহায্য করেন। এছাড়া একাধিক হাদিসে এ রাতে ইবাদত করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
শাবান মাসের পঁচিশ থেকে তেইশ তারিখের রাতে, আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে আসমানে উপস্থিত হয়ে তার বান্দাদের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং তাদের পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। (মুসলিম: ১৩৪৩) এটি শবে বরাতের মর্যাদা এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি রহমত প্রদানের বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
“হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল (দঃ) বলেছেন: যখন শাবানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত আসবে তখন তোমরা ঐ রাত জেগে ইবাদত কর এবং এর পরদিন রোজা রাখ। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা ঐদিন সুর্যাস্তের পর (নিজ শান অনুযায়ী) দুনিয়ার আসমানে আবিভূত হয়ে আহবান করেন: তোমাদের মধ্যে কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি?
আমি মাফ করে দেব। রিজিকের প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি বিপদ থেকে মুক্তি দিব। এভাবে ফজর পর্যন্ত সম্বোধন করতে থাকেন।” (ইবনে মাজা, শাবানের মধ্যবর্তী রাত অধ্যায়, হাদীছ নং:১৩৮৮)
সবথেকে মজার বিষয় হল যে , শতভাগ ভ্রান্ত আহলে হাদিস পন্থীগন পবিত্র শবে বরাতকে অস্বীকার করলেও এদের প্রধানতম ধর্মীয় গুরু আলবানি এই শবে বরাতের হাদিসকে সহীহ এবং বিশুদ্ব বলেছেন।
যদি তারা সত্যিই সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতেন তবে অবশ্যই শবে বরাত নিয়ে অহেতুক ধুম্রজাল তৈরী করতেন না।
এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, তাদের কল্যাণের জন্য দোয়া কবুল করেন এবং আগামীর রিজিক, মৃত্যু ও অন্যান্য বিধান নির্ধারণ করেন। শবে বরাতের রাতে যে কেউ যদি শুদ্ধ মন ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে তওবা করে, তবে তার পাপ মাফ হয়ে যায়।
এর মাধ্যমে একজন মুসলমান আল্লাহর রহমত লাভ করে পরবর্তী জীবনে কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে পারে। এই রাতে বিশেষ ইবাদত, দোয়া, এবং নফল রোজা রাখা খুবই সম্মানিত ও কল্যাণকর। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে, তিনি অবশ্যই মাফ করবেন, কারণ তার রহমত সমস্ত সৃষ্টির উপর ব্যাপ্ত।
আসুন, আমরা সবাই এ রাতে ব্যাকুল হয়ে আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের রুহকে পরিষ্কার করে দিয়ে আমাদের আত্মায় যত ময়লা জমেছে তা ধুয়েমুছে স্বচ্ছ করে দেন। এছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা যেন শুধু এই একটি রাতের অপেক্ষাই না করি বরং প্রতিটি রাতই যেন ইবাদতে রত থাকি।
এ রাতে তসবিহ-তাহলিল, ইসতিগফার, জিকির আজকার, দরুদ শরিফ পাঠ করা, মিলাদ শরিফ, কোরআন তেলাওয়াত বেশি বেশি করতে হবে। কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা বলতে হবে। এছাড়া উমরি কাজা ও নফল নামাজ অধিক পরিমাণে পড়তে হবে।এ রাতে কবর জিয়ারতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ পাক আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত আলোচনার প্রতি গুরুত্ব সহকারে আমল করার তাওফিক দান করুন।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন