শর্ত সাপেক্ষে ৩২৪৭টি গাছ কাটার অনুমতি মন্ত্রিসভার

আমদানি করা তেল খালাসে স্থাপনা (সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং) নির্মাণের জন্য কক্সবাজার ও স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য গাজীপুরে শর্ত সাপেক্ষে সংরক্ষিত বনভূমির ৩ হাজার ২৪৭টি গাছ কাটার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সিঙ্গল পয়েন্ট মুরিং করা হচ্ছে। ওখানে বনে কিছু গাছ আছে সেগুলো কর্তনের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ১৯১ দশমিক ২৫ একর বনভূমি লিজ নিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি, সেখানে প্রায় এক হাজার ৭০১টি গাছ আছে। বিভিন্ন রকমের বেত জাতীয় ঝোপঝাড় আছে, এগুলোর জন্য কয়েকটা শর্ত দিয়ে ব্যবহারের অনুমতি ওনারা (বিপিসি) পেয়েছেন। একটা হচ্ছে, ভূমি ব্যবহারের জন্য ফিক্সড ডিমান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রতি বছর একর প্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা রাজস্ব দেবে বিপিসি।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আর বনজ সম্পদের ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৯ টাকা দিতে হবে। এই টাকা বিপিসি অলরেডি পরিশোধ করে ফেলেছে।’

তিন নম্বর শর্ত তুলে ধরে শফিউল আলম বলেন, ‘যে পরিমাণ গাছের ক্ষতি হল এর পাঁচগুণ গাছ বন অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে বিপিসি রোপণ করবে। সেটা আগামী ১০ বছরের জন্য মেইনটেইন করবে তারা। এসব শর্তে তাদের (গাছ কাটার) অনুমতি দেয়া হয়েছে।’

মহেশখালী পাহাড় মৌজায় ১৯১ দশমিক ২৫ একর জমিন যে গাছগুলো কাটা হবে সেগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ গাছ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেমন- বটগাছ, লালী, বাদাম, বরই, কাউফল, শিমুল, ছাতিয়ান, কদম, সোনালু; এরকম বিভিন্ন জাতের গাছ। খুব দামি গাছ না।’

বনের মধ্যে বিপিসির স্থাপনাটির ধরণ তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি পাইলাইনের মাধ্যমে এনে তারপরে ওটা রিফাইন করে। চট্টগ্রামে যেভাবে আছে মহেশখালীতেও সেরকম করা হচ্ছে। নদীর ধারে জমি থাকতে হয় যেখানে জাহাজে করে তেলটা আসবে। সেটা পাইপ দিয়ে রিফাইনারিতে আনা হবে, এসব সিস্টেমের জন্য এই জায়গাটা নেয়ার প্রয়োজন হয়েছে, হয়তো বিকল্প পাওয়া যায়নি।’

এছাড়া গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য সংরক্ষিত বনভূমির গাছপালা কর্তন ও অপসারণের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সেখানে দুই একর ৩৪ শতক জমি। এখানেও সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির এক হাজার ৫৪৬টি গাছ আছে। কাঁঠাল, জাম, আম, তাল, গামারি, বাঁশ -এ জাতীয় গাছ রয়েছে। এটার মেয়াদ পূর্তিতে সম্ভাব্য মূল্য হচ্ছে ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৬ টাকা। এখানে আকাশমনি গাছ এক হাজার ৪০০টি, অন্যান্য প্রজাতির ১৪৬টি গাছ কাটার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অনুমতিতে বলা হয়েছে- যেহেতু স্টেডিয়ামের জন্য নেয়া হচ্ছে। স্টেডিয়াম ছাড়া ওই জমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।’

শফিউল আলম বলেন, ‘মন্ত্রিসভার আলোচ্য বিষয় ছিল গাছ কাটার অনুমতি দেয়া। জমিটা ছিল সংরক্ষিত বনের। আর গাছগুলো ছিল সামাজিক বনায়নের। যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা নীতিমালা অনুযায়ী টাকা পাবেন। সামাজিক বনায়নে যারা গাছ লাগান তারা এর ৭০ শতাংশ এবং অন্যরা ৩০ শতাংশ পেয়ে থাকেন।’