শান্তির নোবেল পেয়ে যাঁরা অশান্তির পথে হেঁটেছেন!
বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় বিশেষ অবদান রেখে যুগে যুগে অনেকেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। তাঁদের অনেকেই পরে ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ করেছেন। শুধু যে হতাশ করেছেন তা নয়, যাঁরা একসময় প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, পরে রীতিমতো তাঁদের সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। মিয়ানমারের ‘গণতন্ত্রকামী’ নেত্রী অং সান সু চি এই শান্তিকামীদের তালিকার সর্বশেষ জন, যাঁরা শান্তি রক্ষার কথা রাখেননি। চলতি বছরের শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী সপ্তাহে। শান্তির নোবেল পেয়েও যাঁরা কথা রাখেননি তাঁদের গল্প তাঁর জন্য হবে এক সতর্কবার্তাই বটে।
অং সান সু চি: মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইন বৌদ্ধদের চলমান সহিংসতায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে অনেকে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে হাজারো বাড়িঘর। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৪ লাখের বেশি মানুষ। অথচ মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি রোহিঙ্গাদের রক্ষায় নির্বিকার। সু চির এই ভূমিকায় তাঁর সমালোচনা যাঁরা করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটুও।
নরওয়ের নোবেল কমিটি সু চিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে ১৯৯১ সালে। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ‘তাঁর অহিংস সংগ্রামের’ জন্য তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে কমিটি। নরওয়ের নোবেল কমিটির সাবেক সেক্রেটারি অধ্যাপক গেয়ার লুন্ডেসটাড এ ব্যাপারে বলেন, ‘সু চি সমালোচিত হওয়ার আগেও অনেকবার শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন এমন ব্যক্তি সমালোচিত হয়েছেন। তারপরও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার শান্তির সপক্ষে এক শক্তি হয়েই টিকে থাকবে।’
মেনাচেম বেগিন: শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েও যাঁরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে না পেরে সমালোচিত হয়েছেন তাঁদের অন্যতম ইসরায়েলি নেতা মেনাচেম বেগিন। ১৯৮২ সালে লেবাননে আগ্রাসন চালানোর নির্দেশ দেন। এর মাত্র চার বছর আগেই ক্যাম্প ডেভিড শান্তিচুক্তি সই করে মিসরের আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে শান্তিতে নোবেল ভাগাভাগি করে নেন তিনি। ১৯৮১ সালে ইসলামপন্থী এক সেনাসদস্যের হাতে খুন হন সাদাত।
আইজ্যাক রবিন ও শিমন পেরেজ: অসলো চুক্তির জন্য ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনের অবিসংবাদী নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে শান্তিতে নোবেল জয় করেন ইসরায়েলি নেতা আইজ্যাক রবিন ও শিমন পেরেজ। তবে এটি আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব স্থায়ীভাবে মেটাতে পারেনি। পুরস্কার পাওয়ার এক বছর পরই ১৯৯৫ সালে আততায়ীর হাতে নিহত হন আইজ্যাক রবিন।
মিখাইল গর্বাচেভ: শীতলযুদ্ধের শান্তিপূর্ণ অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখায় ১৯৯০ সালে শান্তিতে নোবেল পান সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ। এক বছর বাদেই ১৯৯১ সালে বাল্টিক দেশগুলোর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মাটিতে মিশিয়ে দিতে দেশগুলোতে সামরিক ট্যাংক পাঠান তিনি। শেষ পর্যন্ত দেশগুলো স্বাধীনই হয়েছে।
হেনরি কিসিঞ্জার: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে নোবেল পান ১৯৭৩ সালে। যে প্রচেষ্টার জন্য তাঁরা এই পুরস্কার পান, সেটা ভিয়েতনাম যুদ্ধ অবসানে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। থো এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।-প্রথম আলো
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন