শাহজাহান বিমানে, ডাক-আইসিটিতে জব্বার, শিক্ষায় কেরামত
দফতর পেয়েছেন শপথ নেয়া তিন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর দফতর বদল করা হয়েছে। দফতর পেয়েছেন শপথ নেয়া তিন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া তিন মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীর দফতর বদল করা হয়েছে।
বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দফতর বণ্টন ও অন্যদের দফতর বদল করে আদেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিং শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম দফতর বণ্টন ও দফতর বদলের তথ্য জানান।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বারকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে।
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ পড়ান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। এরপর মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে মন্ত্রী ও একজনকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বর্তমান সরকারের আরও এক বছর বাকি থাকতে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় পরিসর বাড়ানো ও রদবদল আনা হল।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বারকে টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নয় এমন ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিয়োগ) কোটায় মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর সংখ্যা তিন জন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।
এখন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সংখ্যা হলো ২ জন।
বর্তমানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন নুরুজ্জামান আহমেদ। অপরদিকে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শাহজাহান কামালশাহজাহান কামাল ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার আটিয়াতলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. ফরিদ আহমেদ এবং মাতা মাসুমা খাতুন।
চৌমুহনী মদন মোহন কলেজ থেকে তিনি ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পাস করেন এবং একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সক্রিয়ভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
পেশাগত জীবনে শাহজাহান কামাল একজন ব্যাবসায়ী। তিনি ১৯৭২ সালে নবগঠিত লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এ কে এম শাহজাহান ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নারায়ণ চন্দ্র চন্দনারায়ণ চন্দ্র চন্দ ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলাধীন উলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা উলা গ্রামের চন্দ বংশের কালীপদ চন্দ ও মাতা রেণুকা বালা চন্দ। নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করেই ১৯৬৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৯৫ ও ২০০৩ সালে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। এখনও এ পদে রয়েছেন।
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং একাধারে ছয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসন থেকে সপ্তম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। নবম ও দশম জাতীয় সংসদেও একই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। মোস্তাফা জব্বারতথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার ১৯৪৯ সালের ১২ই আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানার চর চারতলা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি। তার প্রতিষ্ঠানের বিজয় বাংলা কি-বোর্ড ১৯৮৮ সালে বাজারে আসে, যা প্রথম বাংলা কি-বোর্ড। তাকে কম্পিউটারে বাংলা ভাষা যুক্ত করার পথপ্রদর্শক মনে করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে মোস্তাফা জব্বার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি মুজিব বাহিনীর খালিয়াজুরি থানার সহ-অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ নেতাও ছিলেন।
কাজী কেরামত আলী
প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী ১৯৫৪ সালের ২২ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার সজ্জনকান্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাজী হেদায়েত হোসেন এবং মাতা মনাক্কা বেগম।
কাজী কেরামত আলী রাজবাড়ী ইয়াসিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম সম্মানসহ এমকম ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ব্যবসার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ১৯৯০ থেকে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯২ সালে রাজবাড়ী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কেরামত আলী। এ ছাড়া ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার আগে কাজী কেরামত আলী সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
মন্ত্রিসভাঃ ২০১৪ থেকে ২০১৭
বিএনপির অংশগ্রহণবিহীন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই নুরুল ইসলাম বিএসসিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আসাদুজ্জামান খান কামালকে স্বরাষ্ট্র ও ইয়াফেস ওসমানকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
এরমধ্যে আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্র ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
একই দিন তারানা হালিমকে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং নূরুজ্জামান আহমেদকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়।
এর আগে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। অপরদিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। একই সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন অতিরিক্ত হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছিলেন।
পরে ওই বছরের ১৬ জুলাই দফতরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
নতুন সরকার গঠনের পর ২০১৪ সালেরর ২৬ ফেব্রুয়ারি খালি থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু। অপরদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।
হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়।
২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাধীন অবস্থায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ইন্তেকাল করেন। এরপর থেকে প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
২০১৬ সালের ১১ মে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনও ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ওই বছরের ১৯ জুন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক মারা যান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন