শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনেও ফেরেনি শৃঙ্খলা
ট্রাফিক আইন বিধি মেনে গাড়ি চালাচ্ছেন না রাজধানীর অধিকাংশ গণপরিবহনের চালক। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনেও রাজধানীর গণপরিবহনে ফেরেনি শৃঙ্খলা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ সংসদে পাস হলেও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতা থামছেই না। ফলে সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
মেগাসিটি ঢাকার সড়কে এমন বিশৃঙ্খলার জন্য গণপরিবহনের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরগাড়ি চালানোর আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করার প্রবণতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তারা বলছেন, গণপরিবহনের ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে হলে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এজন্য রুট পারমিটের প্রক্রিয়া সংস্কার করা, দক্ষ ও পেশাদার চালক তৈরির পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি, টিকিট কাউন্টার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহির ব্যবস্থা করা এবং ট্রাফিক আইন মানতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো দরকার। এসব পদক্ষেপ নিলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।
শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশ নির্ধারিত স্থানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছেন না চালকরা। যত্রতত্র ও সড়কের মাঝখানে ইচ্ছেমত যাত্রী তুলছেন চালক ও হেলপাররা। এছাড়া লেন বিধি না মেনে ও পাল্লা দিয়ে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
রাজধানীর ফার্মগেট, শাহবাগ, মগবাজার ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কে ‘বিশৃঙ্খলা’র পুরনো চেহারায় গাড়ি চলছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাস্তায় গাড়ি কম থাকলেও লেন বিধি না মেনে এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন বাসসহ অন্য পরিবহনের চালকরাও। কেউ কেউ প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালাচ্ছেন।
আর লেন বিধি না মানা, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো ট্রাফিক আইনে অপরাধ তা অনেক চালকই জানেন না বলে জানান।
১৯৮৩ সালের মোটরযান আইনের ১৪২ ধারায় বলা আছে, অতিরিক্ত গতি বা নির্ধারিত গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালালে ৩০০ টাকা জরিমানা করা হবে। অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া মোটরযান আইনের ১৬টি ধারায় বিভিন্ন জরিমানার বিধান থাকলেও কার্যত কোন আইন থামাতে পারছে না বেপরোয়া চালকদের।
চালকরা সড়কে বেপরোয়াভাবে কেন গাড়ি চালায় জানতে চাইলে তুরাগ পরিবহনের চালক আব্দুস সালাম বলেন, আসলে কে কার আগে যাত্রী তুলবে এই ধরনের একটা প্রতিযোগিতা আছে। মূলা কথা, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোর প্রধান কারণ বেশি আয় করা। তবে লেন বিধি না মানা যে ট্রাফিক আইনের লঙ্ঘন, তা তার জানা নেই।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আসলে কিভাবে আইন বাস্তবায়ন করতে হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফেরার পর আবার সড়কে আগের অবস্থা। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সদিচ্ছা। সদিচ্ছা থাকলে আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন চালকদের ট্রাফিক আইন পালনে কোন প্রভাব ফেলেছে কি-না জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, এতো সহজে ফিডব্যাক আসবে না। সবেমাত্র আইন পাস হয়েছে। ফিডব্যাক পেতে সময় লাগবে।
ট্রাফিক আইন কতটুকু মেনে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে পরিবর্তন যে একেবারেই হয়নি তা বলা যাবে না। ট্রাফিক বিভাগ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী শিফুন নেওয়াজ বলেন, অতীতেও আইন ছিলো, বর্তমানে আইনের পরিধিতে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটিও যদি কার্যকর করা না হয় তাহলে কোনো ফল আসবে না।
নতুন আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক যেনো কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ভূমিকা পালনের উপর জোর দেন এ গবেষক। একইসঙ্গে রাস্তা পারাপারে পথচারীদের সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা বলেছেন তিনি।-প্রতিবেদন বাংলানিউজের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন