শিগগিরই পরিবর্তন আসতে পারে ইন্টারনেটের দামে
শিগগিরই মোবাইল ইন্টারনেটের দামে পরিবর্তন আসছে। ‘কমতে পারে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম’— এমনই ইঙ্গিত দিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অবশ্য এজন্য তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলেছেন। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন অপারেটর তাদের প্যাকেজ অফার করবে। সেই অফার পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, আগের চেয়ে ইন্টারনেট খরচ কমেছে।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, এমএনপি (নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের পদ্ধতি) সেবা চালু হয়েছে। যে অপারেটর ভালো সেবা দেবে, মোবাইল গ্রাহকরা সেদিকেই যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ভয়েস কলের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি থাকে ইন্টারনেট। যেহেতু ইন্টারনেটের দাম এখনও বেঁধে দেওয়া হয়নি। ফলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ইন্টারনেটের দাম কমাতে বাধ্য হবে। আমি মনে করি, যে অপারেটর ইন্টারনেটের দাম যত কমাবে গ্রাহক সেদিকেই যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ইন্টারনেটের দাম কমানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা এখনও বলবৎ আছে। কস্ট মডেলিং করে দেখা হবে ইন্টারনেটের ন্যায্য চার্জ কত হতে পারে। ওটা দেখে ‘স্ট্যান্ডার্ড প্রাইস’ ঠিক করা হবে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য এবং নিম্নমূল্য (মূল্য সীমা) বেঁধে দিতে চেষ্টা করবো— যাতে ওই দামের ওপরে কেউ নিতে না পারে।’ দাম বেঁধে দিতে কিছুটা সময় লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে হয়তো কোনও সুখবর দিতে পারবো।’
জানা গেছে, ইন্টারনেট প্যাকেজের স্বল্প মেয়াদ নিয়েও কাজ করবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অনেক অপারেটর একেবারে স্বল্প মেয়াদে ইন্টারনেট প্যাকেজ বাজারে ছাড়ে। কখনও কখনও এক বা দু’দিন মেয়াদের প্যাকেজও বাজারে ছাড়া হয়। দেখা যায়, প্যাকেজ শেষ হয়নি কিন্তু মেয়াদ চলে গেছে। ফলে গ্রাহক আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। নতুন করে প্যাকেজ কিনতে হয়। এই স্বল্প মেয়াদকে একটি যৌক্তিক সময়ে উন্নীত করতে টেলিযোগাযোগ বিভাগের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। মোস্তাফা জব্বারও বিষয়টিতে সায় দিয়ে বলেন, ‘এই বিষয়টিও আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। আমাদের উদ্যোগ হলো গ্রাহককে ভালো একটা এক্সপেরিয়েন্স দেওয়া।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইন্টারনেটের দাম কমানোর আগে সরকার কানেক্টিভিটি নির্মাণের পথে বেশি আগ্রহী ছিল। ইন্টারনেট আছে কিন্তু সংযোগ নেই, তাহলে ইন্টারনেট পৌঁছানো সম্ভব কিভাবে, সেই পরিকল্পনা থেকে আগে কানেক্টিভিটি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। জানা গেছে, আগামী জুনের মধ্যে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছাবে। সেখান থেকে ইন্টারনেট যাবে স্কুল-কলেজসহ সরকারি অফিসগুলোতে। মূলত আগে চাহিদা তৈরি করে পরে ইন্টারনেট পৌঁছানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে দেশে প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের দাম ছিল ৭২ হাজার টাকা। বর্তমানে এর দাম ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে। ব্যান্ডউইথের দাম কয়েক দফা কমানোর পরও সেই অর্থে ইন্টারনেটের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেনি। এই সময়ের মধ্যে মাত্র একবার ইন্টারনেটের দাম কমায় সরকার। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অব্যাহত দাবির মুখে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইন্টারনেটের দাম কমায়।
অন্যদিকে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কী হবে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানো হলে সেই চাপ আমাদের ওপর আসবে না। এমনিতেই আমরা আগের চেয়ে ইন্টারনেটের দাম অনেক কমিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর অনুরোধে ইন্টারনেটের দাম অনেক কমিয়ে গতি বাড়িয়েছি গ্রাহকের জন্য। তবে যে আশ্বাসে আমরা ইন্টারনেটের দাম কমিয়েছি, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।’ আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ব্যান্ডউইথ ক্রয়ে ভ্যাট রিবেটের আশ্বাস পেয়েছিলেন বলে জানান। সেই উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়নও হয়নি। আইএসপিগুলো ইন্টারনেটে ভ্যাট পাঁচ শতাংশ নিলেও আইআইজি ও এনটিটিএনগুলোকে প্রদেয় ভ্যাটে রিবেট না পাওয়ায় আইএসপিগুলোর ‘কস্ট অব সার্ভিস’ এরই মধ্যে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। এটা ঠিক করা না হলে আইএসপিগুলো ব্যবসায়ে টিকে থাকার জন্য হয় গ্রাহককে কোয়ালিটি সার্ভিস দেবে না অথবা শেয়ারিং (ব্যান্ডউইথ শেয়ারিং) বাড়িয়ে দেবে। এটা হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাই বেশি সমস্যায় পড়বেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন