শেখ হাসিনার চিঠির পর অধিকাংশ বিদ্রোহীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খোলা চিঠির পর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন দলের অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থী। দল ও মহাজোটের মূল প্রার্থীর ‘জয় নিশ্চিত করতে এক হয়ে কাজ করার ঘোষণা’ দিয়ে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
রোববার (৯ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহারে দলের সভাপতির ‘বিশেষ অনুরোধে’ সাড়া দেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত দলটির কোনো নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন না বলে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
সূত্র মতে, এবারের নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ৯৫ জনের মতো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে বেশ কয়েকজন বাদ পড়েন। বাদ পড়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পেতে অনেকে আপিল করেননি। এ ছাড়া কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করেন।
গত শনিবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য ভোটের মাঠে ছিলেন। ওই দিনই তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দলের প্রধান শেখ হাসিনা চিঠি দেন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দাবি, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর সারা দেশে ২৪ বিদ্রোহী প্রার্থীকে চিহ্নিত করা হয়। যারা নিজেদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন। রোববারের মধ্যে তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এরপরও কোনো আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে তিনিও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন না। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দলটির মোট কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন, তা জানা সম্ভব হয়নি।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার (৯ ডিসেম্বর) খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিদ্রোহী প্রার্থী গোপাল মণ্ডল, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক ওরফে শামীম, সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রকৌশলী শেখ মুজিবর রহমান, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মনোনীত মশিউর রহমান হুমায়ুন, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান আতা, যশোর-২ আসনে মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা-৭ আসনে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে মহাজোটের (নৌকা) এমএম শাহীনকে সমর্থন জানিয়ে গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মতিন। তিনি ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।
রোববার (৯ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত বরিশাল-২ আসনে আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মোয়াজ্জেম হোসেন, শের-ই বাংলার দৌহিত্র এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা সরাসরি তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন।
নীলফামারী-১ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ড. হামিদা বানু শোভা, নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ও যুবলীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ বাহাদুর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। খুলনা-১, ৫ ও ৬ আসনে মহাজোটের কোনো শরিক দল তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করায় এখানে আওয়ামী ও জাতীয় পার্টি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
নওগাঁ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দুজন এবার মনোনয়ন জমা দেন। গতকাল তাদের মধ্যে একজনের পক্ষে দলের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার চিঠি পান রিটার্নিং কর্মকর্তা। ফলে এ আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তিতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষর দেওয়া একটি চিঠি রয়েছে। চিঠিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা প্রার্থী হন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তারা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা চিঠিতে এবার যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি, তাদের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন