শেরপুরে পানিতে ডুবে নয়, শিশুকে হত্যার পর পানিতে ফেলা হয় ।। আটক-১
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর বানিয়াপাড়ায় নিখোঁজের তিনদিন পর পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া ২২ মাস বয়সী শিশু আলী হোসেন পানিতে ডুবে মৃত্যু নয়, তাকে হত্যার পর পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছিল।
মূল ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার পরও পুলিশের বিশেষ ভূমিকার কারণেই আলী হোসেন হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন হয়েছে।
হত্যাকারী ফারুক হোসেন (৩০) কেউ পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ইতোমধ্যে সে শিকারোক্তি মূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
এ রহস্যই শেষ রহস্য নয়, যারা এ ঘটনাটির ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ মে বৃহস্পতিবার সকালে মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের উত্তর বানিয়াপাড়া (আসামপাড়া) গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের ছেলে ২২মাস বয়সী শিশু আলী হোসেন তার দাদীর হাতে ভাত খেয়ে পানি পান না করেই বাড়ির বাহিরে চলে আসে। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আলী হোসেনকে না পেয়ে পিতা জসিম উদ্দিন ১৪ই মে বিকেলে ঝিনাইগাতী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকেই থানা পুলিশ আলী হোসেনকে উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করে। পরে ১৫ই মে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বানিয়াপাড়া গ্রামের একটি ডোবার কচুরিপানার নিচ থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যেখান থেকে আলী হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, সেখানে তার পক্ষে যাওয়া অসম্ভব। তাই পুলিশের মনে সন্দেহ হয়। পুলিশ আলী হোসেনের মরদেহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় ময়না তদন্তের জন্য। সেখানে ১৬ই মে ময়না তদন্ত শেষে আলী হোসেনের মাথার পিছন থেকে আঘাতের চিহ্ন খুজেঁ পায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ। এরপরেই পুলিশ নিশ্চিত হয় এটা একটি হত্যাকান্ড। আর তখনই শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) বিল্লাল হোসেনের পরামর্শে ঝিনাইগাতীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান নিহত শিশুর বাবার ফুফাতো ভাই উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া (আসামপাড়া) গ্রামের মো. শামছুল হকের ছেলে ফারুক হোসেনকে আটক করে।
এরপর থেকেই আটক ফারুককে বাাঁচানোর জন্য শুরু নানা কৌশল। হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েও শিশু আলী হোসেনের বাবা জসিম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা থানায় কোন অভিযোগ করতে অস্বীকার করতে থাকে। থানায় বারবার ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরও স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বরের কুপরামর্শে অভিযোগ না করার কথা জানায়।
সাংবাদিকদের কাছেও তারা কারোর প্রতি তাদের অভিযোগ নাই বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু নাছোর বান্দা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিশুর বাবাকে বুঝানোর পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে।
এরপরেই আটক ফারুক হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে ফারুক শিশু আলী হোসেনকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে গ্রেফতার দেখিয়ে ১৭ই মে বিকেলে ফারুককে পুলিশ ও আদালতে পাঠানো হলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
পুলিশ সূত্র আরো জানিয়েছে যে, গ্রেফতারকৃত ফারুক ১৩ মে বৃহস্পতিবার বাড়ির পাশে কোদাল দিয়ে গর্ত করে গাছ লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ওইসময় শিশু আলী হোসেন ফারুকের পিছন দিকে তার অজান্তে এসে দাড়ালে কোদালের আঘাত লেগে শিশু আলী হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে ফারুক হোসেন আলী হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রাখতে লাশ নিয়ে বাঁশ ঝাড়ে লুকিয়ে রাখে। এরপর রাতে লাশ নিয়ে বাড়ির পাশের ডোবায় কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখে।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: খায়রুল কবীর সুমন জানান, আমরা মরদেহটি ফুলা অবস্থায় পাই। মরদেহের ওপর থেকে আঘাত পাওয়া যাচ্ছিলোনা। পরে ময়না তদন্তের সময় আমরা তার মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন পাই। আর এ আঘাতেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, আমরা মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানেই এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি। ইতিমধ্যে ওই ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। দ্রুত সময়ে হত্যাকান্ডের মূল আসামি ফারুককে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন