শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বোরো ফসলের মাঠে বন্যহাতির তান্ডব
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বোরো ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্যহাতির দল।
উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও এলাকার পাহাড়ের ঢালে সদ্য রোপিত প্রায় ৩০ একর বোরো ধানের ক্ষেত বন্যহাতির দল পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। তাই বোরো ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। এসব বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে বোরো ফসল রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বন্যহাতির দল উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের নাকুগাঁও এলাকায় ভারত সীমান্তবর্তী লালটিলার গহিন জঙ্গলে আস্তানা করেছে।
দিনে পালিয়ে থাকে গহিন অরণ্যে আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই নেমে আসে চলমান বোরো ফসলি মাঠে। এলাকার কৃষকরা ফসল রক্ষায় রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে ও হৈ-হোল্লোর করে রাত কাটাচ্ছে। এরপরও থামছে না বন্যহাতির তান্ডব।
বনবিভাগ ও স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে ৩০-৪০টি বন্যহাতির একটি দল রাতের বেলায় বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকার ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালায় আর দিনের বেলায় চলে যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার গভীর জঙ্গলে। এসময় একটি বন্যহাতি দলছুট হয়ে উপজেলার কাঠালতলী পাহাড়ে অবস্থান করে।
সেটি সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে চলে আসে। সীমান্ত এলাকার দাওধারা-কাটাবাড়ি পাড়ার মোস্তাফিজুর রহমানের রোপিত বাগানে ফলের গাছ ভেঙ্গে ফেলে ও কলাগাছ খেয়ে ফেলে।
বন্যহাতির দলটি ফের লালটিলার পাহাড়ের ঢালে সদ্য রোপণ করা বোরো ধান ক্ষেতে নেমে প্রায় ১০-১২ জন কৃষকের ৩০ একর বোরো ধান পায়ে মাড়িয়ে নষ্ট করেছে। এছাড়া সেচ কাজে ব্যবহৃত কৃষকের ৫টি সেচপাম্প ও পাইপ ভেঙ্গে ফেলে।
স্থানীয় কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, প্রতি বছর বন্যহাতির দল ফসল ও জান মালের ক্ষয়ক্ষতি করছে। হাতির কবল থেকে কোন বছরই আমরা ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারিনা। আমরা বন্যহাতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি। হাতির তাণ্ডবে আমাদের নির্ঘুম রাত কাটে।
উপজেলার পানিহাটা-তাড়ানী এলাকার এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্য বিজার কুবি বলেন, বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে বোরো ফসল রক্ষায় মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও ডাক-চিৎকার করে বন্যহাতিকে জঙ্গলে ফেরাতে হয়। তিনি আরও জানান, হাতি তাড়াতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন চার্জার লাইট এবং মশাল জ্বালানোর জন্য কেরোসিন তেলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাদের মতো গরীব মানুষের পক্ষে তা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বন বিভাগ ও প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের প্রকৃত তালিকা করে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে। যাতে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন তারা।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জকর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বন বিভাগের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তদন্তকরে ওইসব কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, বন্য হাতিকেও রক্ষা করতে হবে সেইসাথে কৃষকের ফসলও রক্ষা করতে হবে। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাতি তাড়ানোর মশাল জ্বালাতে যে খরচ হয় সেই খরচ দেওয়া হবে।
এছাড়া গারো পাহাড়ি এলাকায় দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানোসহ বন্যহাতির খাদ্য হিসেবে কলাগাছ লাগানোর পরিকল্পনা চলছে বলেও জানান ইউএনও।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন