শ্রীলঙ্কায় হামলা : বাংলাদেশ কতটা শঙ্কামুক্ত?
বাংলাদেশের পুলিশ বলেছে, সন্ত্রাসী হামলার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকলেও শ্রীলংকায় হামলার ঘটনার পর ঢাকাসহ অন্যান্য কিছু জায়গায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বড় ধরনের হামলা করার শক্তি এখন নেই। এরপরও শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য দেশে হামলার ঘটনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তারা নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “নিউজিল্যান্ড এবং সর্বশেষ শ্রীলংকার হামলা, এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও আমরা এগুলো দেখেছি। এসব মাথায় রেখে আমরা বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাচ্ছি। যদিও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ধরনের সহিংস উগ্রবাদী হামলার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তথাপিও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় জোরদার করেছি।”
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো দূর্বল হলেও স্বস্তিতে থাকার সময় এখনও হয়নি।
জঙ্গিরা কতটা শক্তি হারিয়েছে?
তিন বছর আগে ঢাকায় হলি আর্টিজানে হামলার পর বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি।
মনিরুল ইসলাম বলেছেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার কারণে কয়েকটি বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি পর্বেই সেগুলো তারা প্রতিহত করেছেন।
তিনি বলছেন, তাদের অব্যাহত অভিযানের কারণে জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ বা আসনারউল্লাহ বাংলা টিমের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো বড় কোনো হামলা করার শক্তি হারিয়েছে।
“এরা বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। মানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের দিকেই এদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ আছে।”
“একটা বড় হামলা করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি প্রশিক্ষণ, মনোবল, সর্বোপরি যে পরিমাণ রসদ বা সরঞ্জামাদি দরকার, সেগুলো তাদের কাছে নেই বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে ছোটখাট ব্যক্তি বিশেষ কোনো কাজ করতে চাইতে পারে, কিন্তু বড় ধরনের হামলার কোনো আশংকা আমরা আপাতত করছি না।”
তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিশ্বে উগ্রবাদী বা জঙ্গি সংগঠনগুলো সব সময়ই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের মতের সাথে মিল আছে এমন সংগঠনের সাথে একটা যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে।
সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে জঙ্গিদের সাংগঠনিক ক্ষমতা দূর্বল হয়ে পড়লেও তাতে স্বস্তিতে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক মাহমুদা আকতার।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক বলছিলেন, “পুলিশ বা র্যাব অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু আমরা যে পুরোপুরি শংকামুক্ত, এমন নয়।”
“আমরা এখনও জঙ্গিদের ধরার অনেক খবর পাই। এই খবরগুলো কিন্তু প্রমাণ করে,জঙ্গিদের অস্তিত্ব আছে। জঙ্গিরা দূর্বল হয়েছে, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব টিকে আছে এটাও সত্য।”
আইএসের বাংলাদেশীদের নিয়ে কি ভাবনা?
বিশ্লেষকরা বলেছেন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর পতনের পর এর সাথে সরাসরি জড়িত বা তাদের অনুসারিরা বিশ্বে ছড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ থেকে অনেকে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল। ফলে তাদের নিয়েও বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয় রয়েছে বলে তারা মনে করেন।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আইএসের সাথে জড়িত বাংলাদেশের কোনো নাগরিক দেশে ফেরার চেষ্টা করলেই বিমানবন্দরগুলোতে তাদের গ্রেফতার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, এমন বাংলাদেশীর সংখ্যা বেশি নয় এবং তাদের তথ্যও পুলিশের কাছে আছে।
“বাংলাদেশ থেকে খুব মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক ইরাক বা সিরিয়াতে যেতে পেরেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি এবং তাদের অধিকাংশই নিখোঁজ হয়েছে। আর বাংলাদেশী বংশদ্ভূত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকাদের কেউ কেউ ঐ সমস্ত অঞ্চলগুলোতে গিয়েছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদেরও কেউ কেউ নিহত হয়েছে। কেউ কেউ আটক হয়েছে। তাদেরও কিছু কিছু তথ্য আমাদের কাছে আছে।”
“বাকিরা কিংবা আমাদের দেশ থেকে যাওয়া দুই চারজন যদি জীবিত থেকেও থাকে, তারা দেশে ফেরার চেষ্টা করলে তাদেরকে আমাদের প্রবেশ পথগুলোতে ইমিগ্রেশনে শণাক্ত করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা আমরা রেখেছি।”
পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষও সচেতন হয়েছে। এখন এই বিষয়টি জঙ্গি দমনে তাদের জন্য একটা বড় শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন