সংগঠনের স্বার্থে পরিবারকে বিসর্জন দিয়েছি, দল আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেছে
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবঘোষিত কমিটির সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। বিএনপির ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে তার নাম আসায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। রাজনৈতিক সচেতন মহলের কেউ কেউ আবার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের দীর্ঘ রাজনৈতিক পটভূমি থাকলেও তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। শ্রাবণের বাবা যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম। এছাড়া তিনি কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার বড় ভাই মোস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদে অনেকদিন দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আরেক ভাই মুজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। ছোট ভাই আজাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। এককথায়-শ্রাবণের গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত।
বিএনপির চির প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হয়েও শ্রাবণ কীভাবে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্বে এলেন তা জানার আগ্রহ রয়েছে নেতাকর্মীসহ অনেকের।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ সংবাদ মাধ্যমের সাথে খোলামেলা কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হয়ে কীভাবে ছাত্রদলের রাজনীতিতে এভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছু কারণে কলেজজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতি আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। অন্যান্য সংগঠনের চেয়ে তাদের মধ্যে অত্যন্ত মেধাবী, স্মার্ট ও রুচিশীল নেতাকর্মীর সংখ্যা বেশি ছিল। এরপর মনের অজান্তে আমি ছাত্রদলকে বুকের মধ্যে লালন করতে থাকি। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সক্রিয়ভাবে ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করি।
এ কারণে গত ১০ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন আছেন জানিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি আরও বলেন, ‘আমার পরিবার ভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে আমার আদর্শিক দূরত্ব থাকবে। আমার পরিবার হয়তো মনে করেছে-ভিন্ন রাজনীতির কারণে আমার সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। কিন্তু এটা শুধু আমার পরিবার নয়, পুরো দেশেরই একই চিত্র।’
শ্রাবণ মনে করেন, এখন ভিন্নমতের রাজনীতির কারণে একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত দেশকে বিভক্ত করা হয়েছে। ঘরে ঘরে কোন্দল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ করে, তাই তাদের চরিত্রও আওয়ামী লীগের বাইরে যাবে না। সুতরাং তারা আমাকে অস্বীকার করবে-এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘মা-বাবার সঙ্গে থাকতে পারি না। তবে আদর্শিক কারণে আমি গর্বিত। সংগঠনের স্বার্থে আমাকে আমার পরিবার বিসর্জন দিতে হয়েছে। কিন্তু আশার কথা, দল আমার সে আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেছে। এই দৃষ্টান্ত অন্যদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে।
২০০৩ সালে যশোরের কেশবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। থাকতেন হাজী মো.মহসিন হলে। তখন থেকেই সক্রিয়ভাবে ছাত্রদলের রাজনীতে জড়ান তিনি। নিজের সাংগঠনিক যোগ্যতায় বিএনপির অন্যতম ভ্যানগার্ড ছাত্রদলের শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রোববার বিকালে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা করে বিএনপি। শ্রাবণ বিদায়ি কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি, জুয়েল ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন