সংসদে এমপিদের তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগরি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণাসহ বিভিন্ন সময়ে দেওয়া ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের জন্য খোদ সরকার দলীয় এমপিদেরই তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেট আলোচনায় সোমবার সংসদে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহবুব উল আলম হানিফসহ একাধিক সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন।
বাজেট আলোচনার শুরুতে অর্থমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত থাকলেও এক পর্যায়ে তাকে আর সেখানে দেখা যায়নি।
বয়স হয়েছে কম কথা বলুন : শেখ সেলিম
শেখ সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন ভালো কথা। কিন্তু জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করুন। আপনার কিছু কথা বার্তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনি কম কথা বলেন। বয়স হয়ে গেছে কখন কী বলে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে সমস্যা থাকলে দেখা হবে। আপনি বললেন, একলাখ টাকা যার আছে সে সম্পদশালী। চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না হলে একলাখ টাকা, টাকা হয়ে গেল?’
তিনি বলেন, ‘আপনি অর্থমন্ত্রী, আপনার কাজ বাজেট পেশ করা। এ সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, আর কোনটা থাকবে না। একগুয়েমি সিস্টেম বন্ধ করুন।’
সেলিম বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর টাকা নিয়ে গেল। প্রয়োজনে ভ্যাটের আওতা বাড়ান। সব প্রতিষ্ঠানকে ইসিআর মেশিন দেন। যাতে ভ্যাট দিতে বাধ্য থাকে। ঢালাওভাবে ভ্যাট বিশ্বে কোথাও নেই।’
অর্থমন্ত্রী এবার নির্বাচন বিরোধী বাজেট দিয়েছেন : হানিফ
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘বাজেট নিয়ে সারাদেশে আলোচনার ঝড় চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা নির্বাচনি বাজেট নয়। তাহলে অর্থমন্ত্রী কবে নির্বাচনী বাজেট দেবেন? আগামী বাজেট কার্যকর হবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। তখন বর্ষা শুরু হবে। সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গেলে, অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল। এবারই নির্বাচনমুখী বাজেট করা উচিত ছিল। বলা যায় অর্থমন্ত্রী এবার নির্বাচন বিরোধী বাজেট করেছেন। অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন জানা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারাদেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন।’
১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে হানিফ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেছেন গণহারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট নেওয়ার নজির নেই। এটা যৌক্তিক নয়।’
ব্যাংক খাতে লুটপাটের অভিযোগ তুলে হানিফ আরো বলেন, ‘বেসিক ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা, কেন দিচ্ছেন? তারা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে জনগণের? সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেওয়া যাবে না।’
নির্বাচনের আগে অর্থমন্ত্রী জনগণকে বিভ্রান্ত করলেন : আবুল কালাম আজাদ
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সামনে নির্বাচন আসছে। অর্থমন্ত্রী তার আগে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দিলেন। আগামী নির্বাচনে আল্লাহ তাকে (অর্থমন্ত্রী) সুযোগ দেবেন কিনা জানি না। কিন্তু যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে তারা যাতে নির্বাচন করতে পারে সেটা খেয়াল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা মরার ওপর খাড়ার ঘা। সুদ এমনিতেই কম। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার যাতে না কমানো হয়। এটা কমালে ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ। এটা সিনিয়র সিটিজেনরা পান। তারা কোথাও হাত পাততে পারেন না। অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দেন। ঋণ খেলাপিদের বিশাল লিস্ট দিছেন। কই তাদের তো ধরতে পারেন না। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না। আর নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর কর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটার প্রতিবাদ করছি।’
গত ১ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনের পর থেকে মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে আসছেন। সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ঘোষণা, ব্যাংক আমনাতে বাড়তি আবগারি শুল্ক, ভ্যাট নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন