সবার অংশগ্রহণে অহিংস নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও সবার অংশগ্রহণ দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি কোনও রাজনৈতিক দলকে নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উভয়ই অপরিহার্য।
তিনি বলেন, আইএসআইএসবাংলাদেশ নামের একটি গ্রুপকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে।এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচার করা সম্ভব হবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বুধবার ঢাকায় ইএমকে সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
অফ্রিকান-আমেরিকান তথা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের বিষয়ে ঐতিহাসিক মাস পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মকর্তা লিসা কার্টিস শুক্রবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
মার্শা বার্নিকাট জানান, সফরকালে লিসা কার্টিস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন।
এদিকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বুধবার পৃথক এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণের নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার এখনও শুরু হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই গত তিন বছর ধরে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচার চালাচ্ছে। এগুলো আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন মানে শুধু ভোটের দিনে সুষ্ঠু পরিবেশ নয়। ভোটের আগে সবার অবাধে সমাবেশ করার সুযোগ থাকাও মৌলিক বিষয়। কেননা এটার প্রভাব নির্বাচনে পড়ে। এসব অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী মনোনয়ন দেয়াও ওই প্রক্রিয়ার অংশ। নির্বাচনের জন্যে ভয়ভীতি মুক্ত পরিবেশ অবশ্যই প্রয়োজন।
তিনি বিএনপির সাম্প্রতিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ – বিক্ষোভ পালন অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। শেখ হাসিনার ওই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বার্নিকাট বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই যাতে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রশ্ন না থাকে’। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব দলের সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের বার্তা হলো, আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে যাব না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। আমরা জনগণকে সমর্থন করি। আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, গণতন্ত্র না উন্নয়ন কোনটাকে সমর্থন করেন। আমার বক্তব্য হলো, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন উভয়টাই একসঙ্গে প্রয়োজন। গণতন্ত্র তথ্যের অবাধপ্রবাহ দেবে যা বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে। গণতন্ত্র হলো স্থিতিশীল পরিবেশের সর্বোত্তম ভিত্তি’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথিত ‘আইএসআইএস বাংলাদেশ’কে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করার প্রভাব কী হবে জানতে চাইলে বার্নিকাট বলেন, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের অর্থের প্রবাহ বন্ধ করা, তাদের সম্পদ জব্দ, তাদের চিহ্নিত করে বিচার করার সুবিধার্থে যুক্তরাষ্ট্র এই গ্রুপকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে। জেএমবিসহ বিভিন্ন নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে। আইএস অনেক সময় ইন্টারনেটসহ অন্য মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত করে অনেককে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত করে। আমাদের ব্যবস্থায় তাদের বিচার করতে এই তালিকাভুক্তির ফলে সুবিধা হবে’।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশ এক বড় অংশীদার। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে নিবিড়ভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পরের ঘটনা শুধু নয়; সন্ত্রাসবিরোধী তহবিল থেকে বাংলাদেশকে অর্থ দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কমিউনিটি পুলিশ গড়ে তোলা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার যন্ত্র বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তাসহ অনেক ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার সহযোগিতা করছে জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হিলিসহ অনেকেই রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সোচ্চার। কংগ্রেসেও এ নিয়ে কাজ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলই রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চায়। লিসা কার্টিস বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন।
নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ চায় যুক্তরাজ্য : বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। বুধবার সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক বলেন, বাংলাদেশে অবধা, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এদেশের ভবিষ্যতের অগ্রগতির জন্যেই প্রয়োজন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন বাংলাদেশ সফরকালে এই বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপে এবং প্রকাশ্যে কাজ করেছেন।
তাছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের সমাধান। এটা নিয়েও বরিস কাজ করেছেন। তিনি এসব বিষয় মিয়ানমারের সরকারের কাছে তুলেছেন। অ্যালিস ব্লেক বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ অনেক বিষয়েই একসঙ্গে কাজ করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন