সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়ছে
একেবারে তলানীতে গিয়ে পৌঁছানোর পর এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ। গত জুন মাসে খাদ্যশস্যের মজুদ আড়াই লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছায়। এখন তা বেড়ে পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়েছে।
সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশে চালের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। ঈদুল আজহার আগে মোটা চালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা। ঈদের পর সেই দাম এসে দাঁড়ায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এক বছর আগে মোটা চালের কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা। তাই চালের দাম নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয় সব স্তরের মানুষের মধ্যে।
যদিও লাগামহীন চালের দামের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হয়। তারপরও সরকার চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেয়। সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানিও শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে চালের দাম কিছুটা কমে। এখন যদিও মোটা চাল কেজিপ্রতি ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ পাঁচ লাখ ১৯ হাজার টন। এরমধ্যে চাল চার লাখ চার হাজার টন এবং গম এক লাখ ১৫ হাজার টন। এছাড়া বন্দরে ভাসমান অবস্থায় এক লাখ ৩২ হাজার টন খাদ্যশস্য রয়েছে।
গত বছর এই সময়ে মোট মজুদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ লাখ ৮ হাজার টন। এরমধ্যে চাল ছিল ছয় লাখ ১৯ হাজার টন ও গম প্রায় দুই লাখ ৮৯ হাজার টন।
এফপিএমইউ’র তথ্য অনুযায়ী, গত ২০-২২ অক্টোবর খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল চার লাখ ৯৭ হাজার টন। এরমধ্যে চাল তিন লাখ ৯৬ হাজার টন এবং গম ছিল এক লাখ এক হাজার টন। ১১ অক্টোবর মোট মজুদ ছিল চার লাখ ৮৭ লাখ টন। এর মধ্যে চাল তিন লাখ ৮৫ হাজার টন এবং গম এক লাখ দুই হাজার টন।
এর আগে ২১ আগস্ট খাদ্যশস্যের মোট মজুদ ছিল চার লাখ ৫৪ লাখ টন। এরমধ্যে চাল তিন লাখ ১৬ হাজার টন এবং গম এক লাখ ৩৮ হাজার। ১৩ আগস্ট মজুদ ছিল চার লাখ ৩৬ হাজার টন। এরমধ্যে চাল দুই লাখ ৯২ হাজার টন এবং গম এক লাখ ৪৪ হাজার টন।
এফপিএমসি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি খাতে চার লাখ ৩৬ হাজার টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) এবং বেসরকারি খাতে ৩১ লাখ ১৫ হাজার টনসহ মোট ৩৫ লাখ ৫১ হাজার টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছে।
খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, ‘আমরা ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্যের মজুদ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। জি-টু-জি ব্যবস্থায় কিছুদিনের মধ্যে আমরা সাত লাখ টন খাদ্যশস্য আনছি। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই মজুদ ১০ লাখ টনে উন্নীত হবে।’
তিনি বলেন, ‘মজুদ ধীরে ধীরে বাড়ছে, কারণ হলো সংগ্রহ করছি আবার আমাদের বিপুল পরিমাণ খরচও হচ্ছে। কারণ নানা ধরনের কর্মসূচি চলছে।’
বাজারে চালের দাম বেড়ে গেলে দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দিতে ওএমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রি করে সরকার। কিন্তু সরকারি খাদ্যশস্যের মজুদ সংকট দেখা দেয়ায় চলতি বছরের শুরুতেই সারাদেশে সরকারের খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) বন্ধ হয়ে যায়।
পরে গত ১৬ আগস্ট বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চাল আমদানির শুল্ক আরও কমিয়ে দুই শতাংশ করার ঘোষণা দেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। যদিও এর আগে দেশে চাল আমদানির ওপর আরোপ করা বিভিন্ন শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল।
যেকোনো সংকট মোকাবেলায় পূর্ব-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) সরকার ১৫ লাখ টন চাল ও পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করবে বলেও ওইদিন জানিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। বিভিন্ন দেশ থেকে সরকার-টু-সরকার চাল আমদানির পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।
এরপরও চালের বাজারে প্রভাবে পড়েনি। চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সমালোচনার মুখে মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সরকার। অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশীদের চালকলেও অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়। এরপর দফায় দফায় বাড়তে থাকে চালের দাম। গত ১৯ সেপ্টেম্বর চালকল মালিক, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সরকার। ওই বৈঠকে পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল আমদানি ও পরিবহনসহ ব্যবসায়ীদের কয়েকটি দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়।
এরমধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওএমএসে (খোলা বাজারে বিক্রি) আতপ চাল বিক্রি শুরু করে সরকার। দামও ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। পরে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে চাল বিক্রি কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন