সরগরম পাবনার লিচুর হাট-বাজার: দামে ফলনের ক্ষতি কাটানোর স্বপ্ন
দেশের যে কয়েকটি জেলায় বিপুল পরিমাণে লিচুর আবাদ হয় তার মধ্যে অন্যতম পাবনা। পাবনার আগাম জাতের লিচুর কদর রয়েছে সারা বাংলাদেশেই। এ বছর বৈরি আবহাওয়ার কারণে লোকসানের শঙ্কা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে লিচুর ভালো দামে। দাম ভালো পেয়ে বেশ খুশি পাবনার লিচু চাষী, বাগান মালিক ও ফল ব্যবসায়ীরা।
রসালো ও সুমিষ্ট দেশী জাতের এই লিচু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চাহিদা বেশী থাকায় গত বছর যে দামে লিচু বিক্রি হয়েছে এবার তারচেয়ে বেশী দামে কিনছেন পাইকাররা। আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও লিচুতে কোনো রোগবালাই না হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন চাষীরা। পাবনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকারী ফল ব্যবসায়ীদের আগমনে জমে উঠেছে ফলের বাজার।
এ বিষয়ে পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর লিচুর ফুল ও ফল দুটোই অনেক বেশী হয়েছে। গত বছর ফুল ও ফল হয়েছিল ৬০-৬৫ শতাংশ। এ বছর ৮০-৯০ শতাংশ গাছেই মুকুল ও ফল ধরেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী ফল পাবেন চাষীরা। পাবনা জেলায় এ বছর ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টন লিচু পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে। গত বছরও এই অঞ্চলের চাষীরা ১০০ কোটি টাকার ওপরে লিচু বিক্রি করেছিলেন। এই বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী লিচু হয়েছে। অতিরিক্ত খরার কারণে এ বছর কৃষকদের ফল ধরে রাখতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। পরিচর্যায় খরচও একটু বেশী হয়েছে। তবে এখন তারা দাম বেশ ভালো পাচ্ছেন। লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা এবার ফল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী পাবনায় তালিকাভুক্ত ফল চাষী রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। বৈরি আবহাওয়ার সময়ে গাছের যত্ন ও ফলচাষীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১০টি টিম মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন। পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী অঞ্চলের হেমায়েতপুর, চর আশুতোষপুর, গয়েশপুর, নাজিরপুর, আওতাপাড়া, সিলিমপুর, চর গড়গড়ি, জয়ননগর, মানিকনগর, দাশুড়িয়া অঞ্চলে আম ও লিচুর বাগানের সংখ্যা বেশী। গত বছর জেলায় লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৭৪৬ টন। চলতি বছর গত বছরের চেয়ে প্রায় ১ হাজার টন বেশী লিচুর ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পাবনা অঞ্চলে ব্যাপকহারে দেশী আগাম জাতের এই লিচুর চাষ হয়। এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস লিচু চাষ। পাবনা সদরসহ ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার শতাধিক গ্রামে লিচুর বাগানে শোভা পাচ্ছে ঝোপায় ঝোপায় সবুজ ও লাল-হলদে রঙের সুমিষ্ট লিচু। জেলার প্রায় প্রতিটি বাগানেই চোখে পড়ছে বাগান থেকে লিচু পারার দৃশ্য। একদল শ্রমিক লিচু পারছেন, আরেক দল শ্রমিক গুণে গুণে বেঁধে প্যাকেটজাত করছেন।
সরেজমিন লিচু বাগানে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর পড়ালেখার পাশাপাশি লিচুর মৌসুমে তারা বাড়তি আয় করেন লিচুর বাগান থেকে। খুব মজা করেই তারা এই কাজ করেন। দৈনিক হাজিরা হিসেবে ৫-৭শ টাকা করে পাচ্ছেন।
বাগান মালিক ও ফল ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের এলাকার প্রতিটি পরিবার লিচু চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গত বছর প্রচুর লোকসান হয়েছে। তবে এ বছর লিচুর এখন পর্যন্ত যে দাম রয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের এই অঞ্চলের লিচু এখন সারা দেশেই যাচ্ছে। চাহিদা বেশী থাকায় দাম একটু বেশী। এই মুহূর্তে লিচুর বাজার বেশ ভালো। এরকম দাম থাকলে লিচু চাষী ও ফল ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন