সরঞ্জামের অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট
প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পুলিশের বিশেষ শাখা ‘অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট’। বছর পার হয়ে গেলেও সন্ত্রাস ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড নির্মূল এবং প্রতিরোধে গঠিত ইউনিটটি এখনও পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নীতি থাকলেও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে জঙ্গিবাদ নির্মূলে গঠিত বিশেষ এ ইউনিটকে। ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখনও টেন্ডার আহ্বান করেনি পুলিশ সদর দফতর।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউনিটের অর্গানোগ্রাম ও জনবল নিয়োগ সম্পন্ন না হলেও তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তবে পুরোদমে কাজ শুরু করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে টেন্ডার আহ্বান করার জন্য পুলিশ সদর দফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটি) দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান কিংবা অপারেশনে যেতে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা পুরোপুরি প্রস্তুত। রাজধানীর বারিধারার বি ব্লকের ৩৫ নম্বর বাড়িটি এই বিশেষ শাখার কার্যালয়। কিন্তু অপরাধ দমনে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম হাতে না পাওয়ায়, স্বতন্ত্রভাবে অপারেশন পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। জঙ্গি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের কাজে এখন প্রযুক্তির সহায়তা অপরিহার্য। তাই সেই প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলোর জন্য যে টেন্ডার করতে হয় সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। অর্থমূল্য অনেক বেশি হওয়ায় এসব সরঞ্জামের টেন্ডার আহ্বান এখনও প্রক্রিয়াধীন।
ইউনিটের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলোর একটি অংশ ইউনিটের জন্য, অন্য অংশ হচ্ছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) জন্য। এনটিএমসি থেকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো মনিটরিং করা হয়। এরইমধ্যে মনিটরিং সেন্টারের তালিকাভুক্ত হয়েছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট।সেখানে প্রবেশাধিকারের অনুমতি আমরা পেয়েছি। অন্যদিকে, ইউনিটের ভেতরে যে এলআইসি (ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেল) শাখা হবে সেটার টেকনিক্যাল সরঞ্জামগুলো কেনার জন্য টেন্ডার করার বিষয়টি পাইপ লাইনে আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউনিটের সব পর্যায়ের সদস্যদের প্রশিক্ষণ চলছে। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতেও অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষ হলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তাদের দিতে হবে। নিজস্ব সরঞ্জামের অভাবে এখন সরাসরি অপারেশনে যাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ সদর দফতরের এলআইসির মাধ্যমে এখন এই ইউনিট কাজ করছে।’
অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট সূত্র আরও জানায়, সারাদেশে এখনও ইউনিটের স্থানীয় অফিস করা যায়নি। শুধুমাত্র জঙ্গি বিষয়ে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর জন্য ঢাকা থেকেই সাদা পোশাকে অফিসার পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে। ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সিটিটিসি জঙ্গি কার্যক্রমের বাইরেও কিছু কাজ করে। কিন্তু অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট শুধুমাত্র জঙ্গি নিয়েই কাজ করবে। জঙ্গির বাইরে কোনও কাজে এই ইউনিট ব্যবহার করা হবে না।
গত বছরের (২০১৭) ডিসেম্বর থেকে কয়েকটি ছোট অপারেশনে টেরোরিজম ইউনিট অংশ নিয়েছে। বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরের এলআইসির সঙ্গে কাজ করছে তারা। এছাড়া, বগুড়া ও মুন্সিগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গেও কিছু অপারেশন চালিযেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট। এলআইসি শাখার কাজ শেষ হলেই পুরোদমে অপারেশনে যেতে পারবে এই ইউনিট।
ইউনিটের জনবল কাঠামো ৫৮১ জনের। এরমধ্যে প্রায় ৪৫০ জনের মতো নিয়োগ হয়েছে। ইউনিটের প্রধান হিসেবে একজন অ্যাডিশনাল আইজি, একজন ডিআইজি, দু’জন অতিরিক্ত ডিআইজি, পাঁচ জন এসপি, ১০ জন অ্যাডিশনাল এসপিকে পদায়ন করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ১২ জন এখনও পুরোপুরি পদায়ন হয়নি। ৭৫ জন পরিদর্শককে পদায়ন করা হয়েছে। ১২৫ জন উপ-পরিদর্শকের মধ্যে এখনও কিছু নিয়োগ বাকি আছে। কনস্টেবলসহ অন্যান্য পদবীতেও পদায়ন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ইকুইপমেন্ট শাখার এআইজি তানভীর মমতাজ বলেন, ‘শুধুমাত্র অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের জন্যেই নয়। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম কেনার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া।’
জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘আগে জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে বেশি কাজ করতো র্যাব। ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিক টার্গেট কিলিং এবং ২০১৫ সালে এসে তার ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) নামে একটি নতুন ইউনিট গঠন করা হয়। এই ইউনিট শুধু আইজিপির নির্দেশেই ঢাকার বাইরে অপারেশনে যেতে পারে। সেজন্য অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট গঠন করা হয়। সিটিটিসিও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অধীনেই কাজ করবে।’
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট এরইমধ্যে অপারেশনাল কাজ শুরু করেছে। সরঞ্জাম কিছু আছে। কাজের পরিধির সঙ্গে সরঞ্জামের পরিমাণ আরও বাড়বে।’
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংসদে জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এই জঙ্গি কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল ও প্রতিরোধে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে। জঙ্গি দমনে সরকারের সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভবিষ্যতেও নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন