সর্বনিম্ন ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রাখার নির্দেশ
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল উৎপাদন কম এবং সময়মতো আমদানি না হওয়ায় যে কোনো বছরের তুলনায় খাদ্য মজুত সর্বনিম্ন। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতিতে সর্বনিম্ন ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রাখতে মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিফতরকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
একই সঙ্গে চলতি মৌসুমে সাত লাখ মেট্রিক টন ধান ও আট লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও কেন তা বাস্তবায়ন হয়নি তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে নীতিমালা অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহ ও মজুতের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ চাল সংগ্রহ বা আমদানি কোনো ক্ষেত্রেই সরকারের লক্ষ্য এখনো পূরণ হয়নি। তাই মোটা চালের দাম এখনো চড়া। এছাড়া ওএমএস কর্মসূচিও ঝিমিয়ে পড়েছে। চালের মোট মজুত যেখানে ৮-১০ লাখ টন থাকার কথা সেখানে গত ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল চার লাখ ১০ হাজার ৫২ টন। এ সময়ে মোট খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ৫ লাখ ৯৬ হাজার ১১ টন। অথচ গত বছর একই সময়ে খাদ্য মজুত ছিল আট লাখ ৭২ হাজার ৯৪ টন। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার উপরোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাদ্যশস্য মজুত, আমদানি ও সরবরাহ-সংক্রান্ত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, খাদ্যশস্য মজুতের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আগামী ১ বছরের জন্য মাসিক ভিত্তিতে সম্ভাব্য সংগ্রহ, বিতরণ এবং মাস শেষে এ সংক্রান্ত বাস্তবসম্মত প্রজেকশন যতদ্রুত সম্ভব প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়াও এ কাজের জন্য সফটওয়ার তৈরি করতে হবে।
খাদ্য মজুতের পরিমাণ বৃদ্ধি, খাদ্যশস্যের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ, খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিসহ সরকারের অন্যান্য খাদ্য নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনার যাবতীয় বিষয়ে খাদ্য পরিধান ও মনিটরিং কমিটির পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে সভা আহ্বানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিসহ ভিজিএফয়ের আওতাধীন সব কর্মসূচি যথা সময়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যশস্যের মজুত দ্রুত সন্তোষজনক অবস্থায় ফেরানোর লক্ষ্যে স্থানীয় দরপত্র, আন্তর্জাতিক দরপত্র এবং জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিসহ সব প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পাদন করতে হবে। যথা সময়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যমাত্রা যাতে অর্জিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সভায় খাদ্য সরবরাহ, মজুত এবং আমদানি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনায় সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানপূর্বক সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চালের বাজার স্থিতিশীল ও মজুত বাড়াতে চলতি অর্থবছরে জিটুজি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মোট সাড়ে ১১ লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে চার লাখ টন পৌঁছালেও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে পাঁচ লাখ টন চাল। আর চুক্তি বাতিল হয়েছে আড়াই লাখ টনের।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন বলেন, কম্বোডিয়া আড়াই লাখ টন আতপ চাল দিতে জিটুজি চুক্তি করেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে জাহাজীকরণে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তিটি বাতিল হয়। এতে কোনো সমস্যা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা হবে না। কারণ একাধিক দেশ এখন চাল দিতে আগ্রহী।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল জাহাজীকরণে ব্যর্থ হয়েছে কম্বোডিয়া। এছাড়া আড়াই লাখ টন চালের বদলে দেশটি এক লাখ টন চাল দেয়ার প্রস্তাব দেয়ায় চুক্তিটি বাতিল হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জিটুজি পদ্ধতিতে ভারত থেকে আরও এক লাখ টন চাল আমদানির বিষয়ে দু’দফা বৈঠক হয়েছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সাড়ে চার লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও আড়াই লাখ টনের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে ১৫ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে জিটুজি পদ্ধতিতে সাত লাখ টন এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ টনসহ মোট সাড়ে ১১ লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়। জিটুটি চুক্তির মাধ্যমে ভিয়েতনাম আড়াই লাখ টন, কম্বোডিয়া আড়াই লাখ টন, ভারত ও মিয়ানমার এক লাখ টন করে চাল দেয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ভিয়েতনামের চাল পাওয়া গেছে। ভারত ও মিয়ানমারের চালও আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বিশেষ ফেলো এম আসাদুজ্জামান বলেন, চাল সংগ্রহে শুরু থেকেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দূরদর্শিতা ও পরিকল্পনাহীনতা ছিল। ফলে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। আমদানি বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে, কিন্তু বন্যায় আমনের ক্ষতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান উৎপাদন হয়নি। তাই চেষ্টা সত্ত্বেও চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসছে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন