যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভা
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই দিনে ভেঙ্গে পড়লো বেত্রবতী নদীর ৩ সেতু
পানির তীব্র স্রোতে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই দিনে ভেঙ্গে গেলো বেত্রবতী নদীর ৩ সেতু। এতে কলারোয়া উপজেলা সদর ও পৌরসদরের সাথে পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬ ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একই সাথে কলারোয়ার সাথে যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও ঝিকরগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সাথেও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র পশুহাট মোড়ের পাশে অবস্থিত বেত্রবতী নদীর উপর লোহার বেইলি ব্রিজটি ধসে গেছে ও কলারোয়া তরকারি বাজার সংলগ্ন বাঁশ-কাঠের সাঁকোটি মাঝখান থেকে ভেঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একই নদীর উপর পৌরসভাধীন গোপীনাথপুর গ্রামের তারকনন্দী নামক কাঠের সেতুটিও পানির তোড়ে অর্ধভেঙ্গে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রায় একই সময়ে ওই ৩ ব্রিজ, সেতু ও সাঁকো ভেঙ্গে ও ধসে যায়।
কলারোয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া বেত্রবতী নদীর উভয় পাশে ৬টি করে মোট ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। এতে পূর্ব পাশের ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডের সাথে পশ্চিম পাশের কলারোয়া উপজেলা সদর ও পৌর সদরসহ ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের যোগাযোগ বহুলাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার ওই ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ ওয়ার্ডের মানুষ সহজে আর কলারোয়া উপজেলা সদরে আসতে পারছেন না। তেমনি নদীর এপারের ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডের মানুষ ওপারে যেতে পারছেন না। এখন নদী পারাপার ও ওই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ থাকলো উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে পৌরসভাধীন মুরারীকাটি হাইস্কুলের পাশে অবস্থিত পাকা ব্রিজটি। ওই ব্রিজ দিয়ে বেশ সময়ও লাগছে ও অনেক পথ ঘুরতে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে উপজেলা ও পৌর সদরের প্রাণকেন্দ্র পশুহাট মোড়ের বেত্রবতী নদীর উপর পাকা ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরপর ৮ মাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মে মাসে আবার কাজ শুরু হলে পুরানো ব্রিজটি ভেঙে ফেলে যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে পাশে লোহার বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হয়। সেই বিকল্প বেইলি ব্রিজটিই হয়ে পড়ে উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৩ ওয়ার্ডের মানুষের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। বৃহস্পতিবার সকালে সেই বিকল্প ব্রিজটি পানির তোড়ে ধসে যেয়ে রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে, পৌরসদরের তরকারি বা কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার সংলগ্ন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত আরেকটি সাঁকো কিছু দিন আগে ভেঙ্গে গেলে সম্প্রতি সেটা যাতায়াতের উপযোগী করা হয়। কিন্তু বৃহষ্পতিবার সকালে বেত্রবতী নদীর পানির ব্যাপক স্রোতে সেই কাঠের সাঁকোটিও মাঝখান থেকে ভেঙ্গে দু’খন্ড হয়ে গেছে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেখান দিয়ে দু’পাড়ের যাতায়াত।
অপরদিকে, পৌরসভাধীন গোপিনাথপুর তারকনন্দী নামক স্থানের আরেকটি কাঠের বড় সেতুটির বিভিন্ন স্থান ও মাঝ বরাবর ভঙ্গুর হয়ে গিয়ে যানবাহন যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃহষ্পতিবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখান দিয়ে কোনরকম মানুষজন পায়ে হেটে পার হতে পারছেন। তবে যেকোন মুহুর্তে ওই সেতুটিও ভেঙ্গে দু’খন্ড হয়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
এর ফলে কলারোয়া পৌরসভাধীন বেত্রবতী নদীর উপর থাকা ৪ সেতুর ৩টি-ই ভেঙে ও ধসে গেলো। এতে নদী পারাপারে হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন।
সকালে এই সকল সেতু পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছুটির পর সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের বাড়ি ফিরতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে সেতু ৩টি ধসে ও ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বিপুল জনগোষ্ঠী অসহায় হয়ে পড়েছেন। একইসাথে সেতু যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় কলারোয়া কার্যত বিচ্ছিন্ন জনপদে রূপ নিয়েছে।
দ্রুততার সাথে সেতুগুলো সচল করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শরিফুজ্জামান তুহিন ও কলারোয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত হোসেনকে সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ৩টি সেতু সরেজমিন পরিদর্শন করেন কলারোয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কান্তি দাশ, সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম সোহরাওয়ার্দি, পৌরসভার কর নির্ধারক নাজমুল ইসলাম, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক শেখ হাবিল হোসেনসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীবৃন্দ।
পরিদর্শন শেষে কলারোয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কান্তি দাশ ও সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, পৌরসভাধীন দুটি সাঁকো বা সেতু দ্রুত সচল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে বেইলি ব্রিজটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন। সেটাও দ্রতু যাতায়াত উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে অবগত করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন