সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহর হামলা মামলায় আরো ১ জনের সাক্ষ্য গ্রহন
কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আরো একজন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
এছাড়া আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তিনজন সাক্ষীর পুনরায় জেরা করেছে। রোববার দুপুরে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে মোট ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন আদালত। এ মামলায় নতুন সাক্ষ্য দিলেন সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন।
এ ছাড়া কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু, উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলীকে পুনরায় জেরা করা হয়েছে। এদিকে, আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা জাহান সাথীকে কাঠগড়ায় আহবান করেও তাকে জেরা করেননি আসামিপক্ষ।
উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সরদার মুজিব।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, এ্যাড.ওকালত (এডিঃ পিপি), এ্যাড.সাইদুজ্জামান (জিকো) (এপিপি)সহ অন্যান্যরা।
আসামিপক্ষে শুনানীতে অংশ নেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহাবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাড. শাহানারা আক্তার বকুল, অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২), অ্যাড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু প্রমূখ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, এ মামলায় সাবেক সাংসদ ও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ মামলায় আসামিদের সাজা হবে এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর আবারো সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহাবুবউদ্দিন খোকন বলেন, তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও কিছু সাংবাদিকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল। ওই সময় থানা তদন্তে কিছুই পায়নি। সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার কোন ঘটনাই সে সময় ঘটেনি। তিনি আরো বলেন, পিপি রাষ্ট্রপক্ষের আইন পরিচালনা করার কথা থাকলেও তা না করে আইন বহির্ভুত ভাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর এখানে সাক্ষ্য নিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এত দিন পরে কেন এই মামলা এত তড়িঘড়ি করে সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে এটা বোধগম্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষিতা এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে আসেন। হাসপাতাল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ ওঠে তৎকালিন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত ৭০/৭৫ জনের নামে থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে এক যুগ পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৭ মে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩০ জনকে সাক্ষী করে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ সফিকুল ইসলাম। সাতক্ষীরা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আসামিপক্ষের আপীল আবেদনে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চতর আদালত চলতি বছরের ২২ অক্টোবর মামলাটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নথি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন