সাপে কাটলে ওঝা নয়
গেল তিন মাসে সাপের কামড়ে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ৬ গ্রামে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দু’জন বেঁচে গেলেও বাকিদের মৃত্যু হয়েছে ওঝার চিকিৎসায়। সর্বশেষ গত রোববার সাপের কামড়ে এক কলেজছাত্রীসহ দুইজনের মৃত্যু হয়। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে গ্রামগুলোতে। চিকিৎসকরা বলছেন ওঝা নয়, সাপের কামড়ের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র হাসপাতাল।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হাসপাতাল পাড়ার সাপে কাটা রোগী সেন্টু মিয়া জানান, মাঠে কাজ করতে গিয়ে সাপে কেটেছে সন্দেহে ছুটে যান ওঝা শফিকুল ইসলামের কাছে। সেখানে একটি গাছ খাওয়ানোর পর বিষ নেমে গেছে বলে খুলে দেওয়া হয় পায়ের বাঁধন। কিন্তু সাপ সে দেখেনি। এভাবেই সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে ওঝারা। আর সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিতে সকলে দৌড়াচ্ছেন ওঝার কাছে।
তবে সাপের কামড়ে নিহত বিলকিস খাতুনের বোন পারভিন খাতুন জানান, তার বোনকে সাপে কামড়ালে ওঝার ৪/৫ ঘণ্টার ঝাড়-ফুকের পর মেহেরপুর গাংনী হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসাপতাল কর্তৃপক্ষ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। কিন্তু কুষ্টিয়ায় নেয়ার সময় রাস্তাতেই মারা যান বিলকিস খাতুন।
আব্দুল মালেক নামে অপর একজন জানান, সাপে কাটলে প্রথমে ওঝার কাছে চিকিৎসা নিতে যায়।ওঝা ঝাড় ফুক, পানিপড়া, গাছের লতাপাতা দিয়ে চিকিৎসা করে বলে সাপের কোনো বিষ নাই। কিন্তু পায়ের বাঁধন খুলে দিলে তিনি মনে করেন তার শরীরে বিষ রয়েছে। তখন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তার ‘মার্ক বাইট’ দেখে বুঝতে পারেন তাকে বিষধর সাপে দংশন করেছে। পরে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
এলাকাবাসী জানান, তিন মাসে ওঝার চিকিৎসায় মারা গেছে গাংনীর ৬ গ্রামের ১৭ জন সাপে কাটা রোগী। ওঝার চিকিৎসার পরও গাংনীর মালশাদহ গ্রামে একই দিনে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় দুই জনের। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে গেছে দুই জন। কালোর উপর সাদা ডোরা কাটা একটি সাপ ধরা পড়লে আগে কখনই সাপটি দেখেননি বলে জানান স্থানীয়রা। ওই সাপ কামড়ানোর ৫/৬ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। ফলে আতংক বিরাজ করছে গ্রামগুলোতে।
চুয়াডাঙ্গা দর্শনা সরকারি কলেজের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল ইসলাম জানান, পৃথিবীতে ৯৪ প্রাজিতর মধ্যে ৩০ প্রজাতির সাপ অত্যন্ত বিষধর। বাকি ৬৪ প্রজাতির সাপের কামড়ে মৃত্যু নাও হতে পারে। যে সাপটি ধরা পড়েছে বাংলায় এর নাম শঙ্খীনি বা কেউটে, ইংরেজিতে বলে ব্রান্ডেট ক্রিয়েট। এটি অত্যন্ত বিষধর।
মেহেরপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অলোক কুমার দাস জানান, কামড়ের স্থান দেখলে বোঝা যাবে সাপটি বিষধর কি না। সাপ চেনার কোনো দরকার নেই। বিষধর সাপ কামড়ালে একমাত্র চিকিৎসা এন্টি ভেনাম প্রয়োগ। তাই ওঝার কছে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. জিকেএম সামসুজ্জামান জানান, জেলার হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত এন্টি ভেনাম আছে। সাপ কামড়ালেই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ তার।
মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খাইরুল হাসান বলেন, বিষয়টি কিছুদিন আগে জানার পর সিভিল সার্জনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। জাগো নিউজ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন