সাপের স্বপ্ন কোন লক্ষণ বয়ে আনে জীবনে?
স্বপ্ন বড় বিচিত্র বস্তু। হয়, পূর্ণতা প্রাপ্তির আনন্দ উদ্বেলিত করে, না হলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা গ্রাস করে তনু মন। কিন্তু, স্বপ্নের এই দুই অনিবার্য গন্তব্য জানার পরও কি আমরা স্বপ্ন দেখতে ছাড়ি? হয়ত না। তবে, স্বপ্নও আমাদের ছাড়তে চায় না। তাই দুই চোখের পাতা এক করলেই আপনাআপনি মনের আয়নায় ভেসে ওঠে আকাশ কুসুম ছায়াছবি। তাকে না যায় ধরা, না যায় ছোঁয়া। শুধু অনুভবের মাধ্যমে রোমন্থন করা ছাড়া গতি নেই।
কিন্তু অদ্ভূত লাগে যখন ঘুম ভাঙে দিনের আলোর ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নও উবে যায়! যদিও কিছু কিছু স্বপ্নের রেশও অনেক সময় থেকেও যায়। ঘুম থেকে ওঠার পর তখন আমরা ভাবতে বসি কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম? তাই না!
আচ্ছা, কখনও সাপের স্বপ্ন দেখেছেন আপনি? এই ধরুন, চার দিক থেকে এঁকেবেঁকে ধেয়ে আসছে নানা প্রজাতির সাপ। কেউ হয়ত দু’ফাঁক করা জিভ বার করে ঘ্রাণ নিচ্ছে আপনার। অথবা কেউ আবার ছোবল মারতে উদ্যত হয়ে ফোঁস ফোঁস করছে। আর আপনি পালানোর চেষ্টা করেও পারছেন না। আবার কখনও হয়ত এমন স্বপ্নও দেখেছেন, সাপকে পিটিয়ে মারার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না।
আর যদি মেরেও ফেলেন তা হলে একটা ভয় কাজ করছে সব সময়। সাপটির সঙ্গীনি হয়ত সর্বক্ষণ লক্ষ রাখছে আপনাকে। এমন সব স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে উঠেও তার রেশ থেকে যায়। মনের ভিতর দুশ্চিন্তা কাজ করে। ভাবেন, এমন অশুভ স্বপ্ন কেন দেখলাম!
প্রথমে বলে রাখা ভাল, হিন্দু রীতি অনুযায়ী সাপের স্বপ্ন কিন্তু অশুভ নয়। সাপকে শক্তি এবং রূপান্তরিত ভাবনার প্রতীক হিসাবে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাপের স্বপ্ন দেখছেন মানে কোথাও আপনার ব্যক্তি চরিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের উপজাতিরা এবং আদি আমেরিকানরা বিশ্বাস করেন, ইচ্ছাশক্তির প্রতীক হল সাপ। সাপ যেমন নিজের খোলস ত্যাগ করে নতুন রূপ পায় তেমনই সাপের স্বপ্নের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আপনার পরিবর্তিত রূপ। আবার পুর্নজন্ম, সমৃদ্ধি এবং উর্বরতা এই লক্ষণগুলো খুঁজে পাওয়া যায় সাপের স্বপ্নেই।
তবে, অস্ট্রিয়ার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস’ বইয়ে স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে বাস্তব জীবনের সঙ্গে অধিকাংশ স্বপ্নের মিল থাকে। ফ্রয়েডে মতে, দুটি মানসিক পরিস্থিতিতে স্বপ্ন দেখি আমরা। প্রথমত, আমাদের অবচেতন মনে যে সুপ্ত ইচ্ছা লুকিয়ে থাকে তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রবলভাবে পূরণ করার চেষ্টা করি আমরা।
আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা। স্বপ্নের মাধ্যমে আমরা ‘স্বার্থ সিদ্ধির জন্য’ ইচ্ছাকে দমনও করি। অর্থাত্ মোদ্দা কথা, সব স্বপ্ন আসলে কোনও না কোনও ভাবে ইচ্ছাপূরণের বাসনা থেকেই উদ্ভূত। সেটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুটোই হতে পারে।
অর্থাত্ ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী, আপনি যে সাপের স্বপ্ন দেখার পিছনে, বাস্তব জীবনের কোনও উদ্বেগ, ভয় বা ক্রোধ জন্মেছে এমন ঘটনার যোগ রয়েছে। সেগুলি অবচেতনে সুপ্তবস্থায় ছিল। তাই, স্বপ্ন দেখার পর যদি মনে দাগ কেটে থাকে, তাহলে ভয় না পেয়ে এ বার স্বপ্নের সূত্রগুলি সত্যান্বেষীর মতো খুঁজতে থাকুন…
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন