সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কৌশলী বালু সিন্ডিকেট; সরকারের শত কোটি টাকার লুট
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে করতোয়া নদী খননের কাজ অসম্পূর্ণ থাকলেও সম্পূর্ণ হতে চলেছে স্তুপ করে রাখা নদী খননের শত কোটি টাকার বালু বিক্রি।
আর অবৈধভাবে বালু বিক্রির জন্য বালু সিন্ডিকেট একদিকে নিয়েছে নয়া কৌশল, অন্যদিকে প্রশাসনের নমনীয়তা এবং উদাসীনতায় নির্বিঘ্নে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এরফলে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারালেও মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে নদী খননের বালু লুটের মহোৎসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ শাহজাদপুরের সচেতন মহল মাঝে মাঝে সরব হলেও বেপরোয়া বালু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় আস্তে আস্তে গাঁ-সওয়া হয়ে যাচ্ছে সকলের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি শাহজাদপুরে করতোয়া নদী খননের বালু স্তুপ করে রাখা বেশ কিছু পয়েন্ট সরকারিভাবে টেন্ডার হয়েছে। এই টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ের সুযোগ থাকলেও সেখানে বাঁধ সাধছে একটি অসাধু চক্র। টেন্ডারে পাওয়ার পর মামলা ঠুকে দিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য বের করেছে নয়া কৌশল। এদিকে মামলা ঠুকে দিয়ে থেমে নেই চক্রটি। তড়িঘড়ি করে রাতের অন্ধকারে চলছে তাদের বালু লুটের মহোৎসব।
অন্যদিকে আরেকটি বালু লুটপাটকারী চক্র সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে প্রমাণ করতে সচেষ্ট রয়েছে স্তুপ করে রাখা কোটি কোটি সিএফটি বালু করতোয়া নদী খননেরই নয়। আইনের নানা মারপ্যাচে এই অভিনব কায়দায় সফল অসফলের তোয়াক্কা না করেই তারা প্রকাশ্য দিবালোকে মেতে উঠেছে লুটপাটে।
সরকারি নদী খননের এই বালু লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও অর্থ আর ক্ষমতার জোরে আইনের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে এই বালু দস্যুরা।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোতাজিয়া ইউনিয়নের গঙ্গাপ্রসাদ এলাকার কোল্ড স্টোরের পাশে অন্তত ১৫ বিঘা ফসলী জমি কৃষকদের কাছে থেকে কৌশলে লিজ নিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে প্রায় দুই কোটি সিএফটি নদী খননের বালু। সেখান থেকে প্রকাশ্যেই এক্সভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে বালু তুলে নিয়ে নির্বিঘ্নে একের পর এক ছুটে চলছে ড্রাম ট্রাক। প্রতিদিন ৩-৪ লাখ সিএফটি বালু এই পয়েন্ট থেকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী সোবহান এবং কামরুল।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তাদের বালুর পয়েন্টের অফিসে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত সটকে পড়ে তারা। পরে মুঠোফোনে সোবহানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী অরুণ খানের নির্দেশে তারা বালু বিক্রি করছেন।
জানতে চেয়ে পরিবহন ব্যবসায়ী অরুণ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি প্রতিবেদকে উল্টো প্রশ্ন করেন, “আপনাদের কে বলেছে এগুলো নদী খননের বালু?” পরে মামলা করে তিনি জিতেই পয়েন্ট থেকে বালু বিক্রি করছেন বলে জানান।
এদিকে উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের দরগার চর, শ্রীফলতলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পয়েন্টে স্তুপ করে রাখা নদী খননের বালু অধিকাংশ বিক্রি হয়ে গেলেও সম্প্রতি কয়েকটি বালুর পয়েন্ট টেন্ডার হয়। সেটাও কৌশলে মামলা করে স্থিতাবস্থা করিয়ে রাতের অন্ধকারে লুট করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। সন্ধ্যার পর থেকেই একের পর এক আলো জ্বালিয়ে ছুটে আসে ট্রাক। তারপর দানবের মতো শব্দ করে বালু ভর্তি করে ছুটে যায় নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে। এই লুটপাটে নির্দিষ্ট একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তা বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কার্যকরী উদ্যোগ।
এদিকে পুরো উপজেলা ঘুরে, রূপবাটি, পোতাজিয়া, নরিনা, গাড়াদহ ইউনিয়নে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অনীহার কারণে ইতোমধ্যেই লুট হয়ে গেছে করতোয়া নদী খননের শত কোটি টাকার বালু। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে কিছু সংখ্যক বালুর পয়েন্ট টেন্ডার হলেও সেটাও বালু দস্যুদের কৌশলী মামলায় হারাতে বসেছে কার্যকারিতা। ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে শত কোটি টাকা, সেইসাথে দানব আকৃতির ড্রাম ট্রাকে করে ওভার লোডে বালু বহন করায় সরকারের হাজারো কোটি টাকায় নির্মিত কাঁচাপাকা সড়ক নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভেঙেচুরে নানা খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে । এরজন্য সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন একেবারে ঢাকা পড়ছে করতোয়ার বালুতে।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন জানান, অবৈধভাবে যদি কেউ রাতের অন্ধকারে বালু বিক্রি করে থাকে তাইলে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (শাহজাদপুর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোহাম্মদ ইমতিয়াজের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাহজাদপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও বালুর বিষয়ে তাকে কোন দায়িত্বে রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন কেটে দেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন