সিলেটে ৫০ হাজার গ্যাস প্রিপেইড মিটারের আওতায়! ভোগান্তির শেষ নেই
জালালাবাদ গ্যাস ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেট নগরীর ৫০ হাজার গ্যাস গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। ৮ মাসে নগরীতে ৪৮ হাজার ৬০০ মিটার স্থাপন হয়েছে, এতে গ্রাহকের আগ্রহ বেড়েছে বলেও জানান তারা।
তবে রিচার্জ সিস্টেমসহ নানা গ্রাহক ভোগান্তি রয়েই গেছে, প্রিপেইড মিটারের আওতায় বাসা বাড়ি নিয়ে আসাতে অনেকে হিসাব নিকাশ করে চলা ফেরা করতে দেখা গেছে, তবে অনেকে অভিযোগ করেন ১ হাজার টাকা রির্চাজ করে ১২/১৩ দিনের শেষ হয়ে যাচ্ছে, যার প্রেক্ষিতে বাকি অর্ধেক মাসের দিন গুলো সিলিন্ডায়ার গ্যাস ব্যবহার কাছেন বলে জানান।
কয়েকজন গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাসা-বাড়ীতে গ্যাসের লিকেজ সমস্যা অনেক পুরনো। প্রিপেইড মিটার থাকার কারণে লিকেজ থাকলে মাসের অর্ধেক সময়েই ব্যালান্স শেষ হয়ে যায়। ফলে অনেকেই আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া ব্যালান্স রিচার্জ সিস্টেম সহজলভ্য না হওয়ায় অনেকেই ব্যাংক থেকে রিচার্জ করতে গিয়ে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন।
বতর্মানে জালালাবাদ গ্যাসের ২ লাখ ২১ হাজার ৪৫৯ গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে আবাসিক বা গৃহস্থালি ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৪ জন। বাকি ১ হাজার ৬৮৪টি সংযোগ বিভিন্ন শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হোটেল- রেস্তোরাঁ, চা বাগান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে সিলেট সিটি করর্পোরেশন ও সদর উপজেলার প্রায় ৯৫ হাজার। তাদের মধ্যে ১ম ধাপে ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে।
২০১৯ সালে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে জালালাবাদ গ্যাস। প্রকল্পে ১২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। চুক্তির পর মিটার স্থাপনে মালপত্র সিলেট আনা হয়।
গত বছরের মে মাসের শেষের দিকে প্রচার চালানোর পাশাপাশি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে জালালাবাদ গ্যাস। কিন্তু এর আগ থেকে অর্থাৎ এপ্রিলের শেষের দিকেই সিলেট সিটি করর্পোরেশন এলাকা ও সদর উপজেলায় প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। মিটার গুলো বিনামূল্যে দিলেও একাধিক ডাবল চুলা থাকা সাপেক্ষে বাসা পর্যন্ত ডিআই পাইপ ও সংযোগ স্থাপনের খরচ গ্রাহককে বহন করতে হচ্ছে। তবে গ্যাস রাইজার থেকে সরাসরি একটি লাইন পর্যন্ত খরচ বহন করছে জালালাবাদ গ্যাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিটারের মূল্য মাসিক ভাড়া হিসাবে সমন্বয় করা হবে। নিকটস্থ রিচার্জ পয়েন্ট থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কিনে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যাবে। রিচার্জ শেষ হলেও এতে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের সুবিধা থাকবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রিপেইড গ্যাস মিটার থাকলেও সিলেটে প্রথমবারের মতো চালু হয় এ পদ্ধতি।
জালালাবাদ গ্যাস (জেজিটিডিএসএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গড় গ্যাস ব্যবহার ৬৬ ঘন মিটার থেকে ৪০ ঘন মিটাওে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহক প্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার। গ্যাস বিতরণ লাইন লিকেজ জনিত অপচয়ও রোধ হবে।
গত বছরের শুরুতে ১ম ধাপে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, হাউজিং এস্টেট, মিয়া ফাজিল চিশত, আম্বরখানা, মিরাবাজার,মেহেন্দীবাগ, লামাবাজার, মেজরটিলা, কদমতলী, আলমপুর, হবিনন্দী সহ তৎপাশ্ববর্তী কয়েকটি এলাকায় সার্ভে করা হয়। প্রথমেই শাহজালাল উপশহর ও হাউজিং এস্টেট এলাকায় পাইলটিং ভিত্তিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কারণ সরকারি মালিকানাধীন এই আবাসিক এলাকা পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে। তাই এখানে কাজ করা সহজ হবে। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরজুড়ে চলতে থাকে মিটার স্থাপনের কাজ।
জানা গেছে, সিলেটে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে এক বছর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রথম ডিপিপি অনুযায়ী ২০২২ সালের বছরের নভেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। আর গেল বছরের মার্চের মধ্যে কাজ শুরুর কথা। তবে ডিপিপি সংশোধন করে ২০২২ সালের মার্চে দরপত্র আহ্বান করে জালালাবাদ গ্যাস। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী লিটন নন্দী আমাদের প্রতিবেদকে জানান, সিলেট নগরীতে ১ম ধাপের প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। গ্রাহকরাও সাড়া দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার গ্রাহকের মিটার বসানো হয়েছে। কোনো গ্রাহক নিজ ইচ্ছায় মিটার স্থাপন করতে চাইলে ৪টি আবাসিক কার্যালয়েও যোগাযোগ করতে পারেন। এতে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মিটারিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
মিটারিংয়ের ফলে প্রধানত গ্যাসের অপচয় কমেছে। সরকার নিয়মিত রাজস্ব পাবে, বিল বাকি রাখার কোনো সুযোগও থাকছে না। এতে সরকার গ্রাহক উভয়ের লাভ।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডডি সিস্টেমস লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান (চলতি দায়িত্ব) বলেন, প্রিপেইড মিটারের কাজ অনেক দুর এগিয়ে গেছে।
ইতোমধ্যে ৪৮ হাজার ৬০০ মিটার স্থাপন হয়ে গেছে। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই ১ম ধাপের ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু শুরুর দিকে গ্রাহকদের অনাগ্রহ ও আন্তরিকতার ঘাটতি থাকায় কাজ চলছিল ধীরগতিতে। শেষ সময়ে গ্রাহকদেরকে আগ্রহ বেড়েছে, ফলে আমরা লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। ফেব্রুয়ারীর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ চলছে। ১ম ধাপে ৫০ হাজার মিটার স্থাপন শেষ হলে পরবর্তীতে আরেক ধাপে আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাকীদেরও প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ শুরু হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন