সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সিদ্দিক হত্যাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা
রাজধানীর বনানীতে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সি হত্যায় জড়িতদের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজ পর্যালোচনা করে গ্রেফতারে তৎপর হয়েছে পুলিশ। পরিবারের দেয়া বক্তব্য ও ‘এমএস মুন্সি ওভারসিজ’ নামে রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিয়েও পর্যালোচনা চলছে।
থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ডিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ঘটনার নেপথ্যে চাঁদাবাজির বিষয়টির প্রমাণ মিলছে না। তবে আর্থিক, ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক কিংবা স্থানীয় দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে।
ওই ঘটনায় ভবনটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রহরী বায়েজিদ বাজি ও অফিস স্টাফ আলী হোসেনকে আটক করে বনানী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে থানা পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে হত্যাকারীদের ছবি অস্পষ্ট হওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ফোন কল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিডিয়ায় কোনো ধরনের ক্লু রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার রাতে বনানীর ৪ নম্বর রোডের বি ব্লকের ১১৩ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত রিক্রুটিং এজেন্সি ‘এমএস মুন্সি ওভারসিজ’ অফিসের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সিকে (৫০) গুলি করে হত্যা করে চার জন দুর্বৃত্ত। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের ৩ কর্মকর্তা মির্জা পারভেজ (৩০), মোখলেসুর রহমান (৩৫) ও মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯) গুলিবিদ্ধ হন।
এ ঘটনায় ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে বনানী থানায় নিহত ব্যবসায়ী সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহত সিদ্দিক হোসেন মুন্সি তার স্ত্রী জোসনা বেগম, দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ও সাবিহা সিদ্দিক এবং ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে একটি বাসায় বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত সিদ্দিকুরের বুকের বামপাশে একটি গুলি ঢুকে পিঠের ডান পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। আর একটি গুলি তার বাম হাতে লাগে।
বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, হত্যার ঘটনার নেপথ্যে কারণ এখনও সুস্পষ্ট নয়। আমরা সব ধরনের বিষয় বিবেচনায় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছি।
ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বনানীতে অফিসে ঢুকে সিদ্দিক হোসেন মুন্সি হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল মাত্র আড়াই মিনিটে। এই সময়ের মধ্যে একজনকে হত্যা ও ৩ জনকে গুলি করে পালায় তারা।
বনানীর চার নম্বর রোডের ১১৩ নম্বর সেই বাড়িটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রহরী বায়েজিদ বাজির দেয়া তথ্যের সত্যতা মেলে সিসিটিভির ফুটেজে।
বনানীর ওই ভবনের বাইরে ৩টা সিসি ক্যামেরা থাকলেও বিকেল ৫টার পর ২টি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়া হয়। চালু থাকে মাত্র ১টি। তদন্তের জন্য ভবনের সেই ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে আসে পুলিশ। ফুটেজে দেখা যায়, মুখোশধারী ৪ জন স্বাভাবিকভাবে হেঁটে ৭ টা ৪৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে মেইন গেট দিয়ে ঢুকে অফিসে যায়। ৭ টা ৫২ মিনিট ৬ সেকেন্ডে প্রায় আড়াই মিনিট পর তারা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে বের হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে বায়েজিদ পুলিশকে জানায়, তার সামনে দিয়েই ৪ জন ভেতরে ঢুকে আড়াই মিনিট পর বেড়িয়ে যায়। বের হওয়ার সময় তাদের মুখোশ ছিল না। ভেতর থেকে একজন দরজায় জোরে জোরে শব্দ করছিল। শব্দ শুনে বাইরে থেকে দরজা খুলে ভেতরে সবাইকে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখি। তবে গুলির কোনো শব্দ শুনতে পাইনি।
এ বিষয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে। সন্ত্রাসীরা মুখোশ পড়ে এসেছিল। হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনও নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক, স্থানীয় কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি উত্তর) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. শাহজাহান বলেন, ডিবি পুলিশ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। আমরা বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত পেয়েছি। তবে আসামিদের এখনও শনাক্ত করা যায় নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ধরে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ঘটনার কারণ জানতে পারিবারিক, আর্থিক, ব্যবসায়িক ও স্থানীয় কোনো দ্বন্দ্ব ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন