সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে আবারো প্রায় ২ কোটি টাকার মালামাল জব্দ

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জ ও সিলেট সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে আবারো প্রায় ২ কোটি টাকার বিভিন্ন মালামালসহ যানবাহন আটক করেছে বিজিবি। কিন্তু চোরাচালানের মদতদাতা প্রশাসনের অসৎ ব্যক্তিরাসহ সোর্স পরিচয়ধারী ও চিহ্নিত চোরাকারবারীরা রয়েগেছে অধরা। তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে- গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রæয়ারী) রাত থেকে আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪৮ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে থাকা সিলেট ও সুনামগঞ্জ সীমান্তের বাংলা বাজার, উৎমা, তামাবিল, ডিবির হাওর, সোনালী চেলা, প্রতাপপুর, শ্রীপুর, বিছনাকান্দি, সংগ্রাম, লাফার্জ, কালাসাদেক, পাšথুমাই ও সোনারহাট বিওপির বিজিবি জোয়ানরা পৃথক অভিযান চালিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে আনা ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪শ টাকা মূল্যের মহিষ, চিনি, সুপারী, কম্বল, বিড়ি, রসুন, শিং মাছ ও মদসহ ডিআই পিকআপ, মাহিন্দ্রা ট্রাক্টর ও পাথর উত্তোলনের নৌকা জব্দ করেছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জের চিনাউড়া সীমান্তের মালাইগাঁও এলাকা থেকে ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের আড়াই হাজার পিস ভারতীয় ঔষধ জব্দ করা হচ্ছে।

এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রæয়ারী) ভোর ৬টা থেকে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী ও ১২০৩এর ৩এস পিলার সংলগ্ন সাহিদাবাদ বিজিবি পোষ্টের সামনে দিয়ে ভারতের ৩/৪গজ ভারতের ভিতর থেকে ৪/৫শ লোক দিয়ে ওপেন কয়লা ও পাথর পাচাঁর শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী চোরাকারবারীরা। তারা সারাদিন পাচাঁরকৃত কয়লা ও পাথর ঠেলাগাড়ি ও মোটর সাইকেল দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে পরিবহন করে লাউড়গড় বাজার ও তার চারপাশে ওপেন মজুত করে। সন্ধ্যার পরে সিন্ডিকেডের ২-৩জন সদস্য বিজিবি ও থানা-পুলিশের নাম ভাংগিয়ে চাঁদা নিয়ে পাচাঁরকৃত কয়লা ও পাথর ট্রাক বোঝাই করে পাশের মাছিমপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা দিয়ে সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। আওয়ামী লাগের স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত ভারত থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথর বাণিজ্য করে চোরাকারবারীরা হয়েগেছে কোটিপতি। তবে বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান সুনামগঞ্জে কর্মরত থাকাকালীন সময় ওই সিন্ডিকেডের অবৈধ কয়লা ও পাথর বোঝাই ৮-১০টি ট্রাক ও ১০-১৫টি স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকাসহ ২শতাধিক ঠেলাগাড়ি ও বারকি নৌকা জব্দ করেছেন। কিন্তু ওই বিজিবি অধিনায়ক চলে যাওয়ার পর এই সীমান্তে সোস পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীদের দাপট বেড়ে যায়।

অন্যদিকে আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রæয়ারী) ভোর সাড়ে ৫টা পাশের চাঁনপুর সীমান্তের শিমুল বাগানের সামনে মাহারাম নদীতে অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত ৩৯ বস্তা ফুছকাসহ ৩টি অটোরিক্সা জব্দ করেছে লাউড়গড় ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা। স্থানীয়রা জানায়- প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রæয়ারী) রাত সাড়ে ৭টা থেকে চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর ও ১২০৩ পিলার এলাকা দিয়ে ২শতাধিক লোক দিয়ে ভারত থেকে ওপেন ফুছকা, জিরা, কম্বল, বিড়ি ও মদ পাচাঁর করে অটোরিক্সা বোঝাই করে শিমুল বাগানে সামনের রাস্তা দিয়ে বাদাঘাট বাজার, বারহাল, কামড়াবন্দ ও শিমুলাতলাসহ লাউড়গড় বাজার ও ঢালারপাড় গ্রামের নিয়ে মজুত করা শুরু হয়। টহলে আসা বিজিবি সদস্যদের সাথে নিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা বিজিবির নামে প্রতিবস্তা ফুছকা থেকে ১৫০টাকা, পুলিশের নামে ১শ টাকা, প্রতিবস্তা চিনি বিজিবি ও পুলিশ ১শ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল থেকে আলোচনা সাপেক্ষে চাঁদা নিয়ে প্রতিরাতে ওপেন কোটিকোটি টাকার মালামাল পাচাঁর করছে। আর এই অবৈধ বাণিজ্য চলেছে দীর্ঘদিন যাবত। অন্যদিকে প্রতিদিন টেকেরঘাট সীমান্তের পুলিশ ফাঁড়ি ও হাইস্কুলের পিছন দিয়েসহ নিলাদ্রী লেকপাড়, বুরুঙ্গাছড়া ও রজনী লাইন এলাকা দিয়ে শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে নিলাদ্রী লেকপাড় ও কয়লারঘাটে অবস্থিত বিভিন্ন ডিপুতে ওপেন মজুত করতেছে সোর্সরা। একই ভাবে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে কয়লা ও মদ পাচাঁর করে দুধের আউটা, নতুন বাজার, তেলিগাঁও, বানিয়াগাঁও, জামালপুর ও শ্রীপুর এলাকা মজুত করা হচ্ছে। এছাড়া চারাগাঁও সীমান্তের জংগলবাড়ি, কলাগাঁও, এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে অবস্থিত ১০-১৫টি ডিপুতে ও ৮-১০জন সোর্সদের বাড়িতে মজুত করে ওপেন বিক্রি করছে চোরাকারবারীরা। এদিকে বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন ও কচুয়াছড়া এলাকাসহ মধ্যনগর সীমান্তের বাংঙ্গালভিটা, মাটিরাবন সীমান্তে দিয়ে প্রতিদিন গরু, মহিষ, মাছ, চিনি, বিড়ি, মদ ও কসমেটিকস পাচাঁরের খবর পাওয়া গেছে। অথচ সুনামগঞ্জে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সীমান্তে পৃথক অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লা ও চুনাপাথর, বিড়ি, ঘোড়া, গরু ও মাদকদ্রব্যসহ অর্ধশতাধিক চোরাকারবারী ও জুয়ারীদের গ্রেফতার করেছেন।

এব্যাপারে মালামাল জব্দ ও সীমান্ত চোরাচালানের বিষয়ে ৪৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোঃ হাফিজুর রহমান (পিএসপি) সাংবাদিকদের জানান- সীমান্ত সুরক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধ করার জন্য এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং গোয়েন্দা তৎপরতাসহ সীমান্ত অনিয়মের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।